<p>বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিতেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। সেই বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতেন তার অনুসারীরা। অশালীন ভাষায় গালিগালাজের কারণে দেশব্যাপী তিনি ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন।</p> <p>আওয়ামী লীগের এই নেতা গত দেড়যুগে ঘুষ, দুর্নীতি ও দখলের মহারাজ হয়ে ওঠেন। হিন্দু ব্যক্তির জমি জোরপূর্বক দখল করে বানিয়েছেন বাগান বাড়ি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরে নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য ও স্বৈরাচার সরকারের নির্বাচনের সময় মনোনয়ন বাণিজ্য করে তিনি কামিয়েছেন শত শত কোটি কোটি টাকা। অবৈধ এসব টাকা দিয়ে নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। সোনা চোরাচালনের সঙ্গেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের এই নেতার বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন মিন্টু।</p> <p>২০০৯ সালে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন সাইদুল করিম মিন্টু। পরে ২০১১ সালে ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে আইনি জটিলতা দেখিয়ে এক মেয়াদে ১১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পান তিনি। পরে ২০২২ সালের সম্মেলনেও একই দায়িত্ব পান তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ট্রমাকে শারীরিক আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/17/1729138111-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ট্রমাকে শারীরিক আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/prescription/2024/10/17/1436040" target="_blank"> </a></div> </div> <p>জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী মতকে দমন-পিড়নে ঝিনাইদহে বেশি সক্রিয় ছিলেন মিন্টু। প্রতিপক্ষকে হামলা-মামলা হত্যাসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে করেননি তিনি। বিরোধী মতের হওয়ায় ২০১৪ সালের মার্চে ইজারারন এক কোটি টাকার দ্বন্দ্বে তার নির্দেশে হত্যা করা হয় তৎকালীন জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার বিশ্বাসকে।</p> <p>২০১৫ সালের জুনে শহরের মর্ডান মোড় এলাকায় তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা, একই বছরে অক্টোবরে সানাউল্লাহ সানাকে কুপিয়ে হত্যা, ২০২১ সালে এপ্রিলে সদর উপজেলার খাজুরা এলাকায় আবনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা, ২০২২ সালের অক্টোবরে সরকারি ভেটেনারি কলেজছাত্র সংসদকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ভিপি মুরাদ, শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম ও সমরশে বিশ্বাসকে কুপিয়ে হত্যা করে মিন্টুর ক্যাডারবাহিনী। এ ছাড়াও বিরোধী মতের অন্তত ১২ জনকে প্রশাসনের মাধ্যমে বন্ধুকযুদ্ধে হত্যা করার নির্দেশদাতা থাকারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ৫" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/17/1729138929-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১, আটক ৫</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/17/1436042" target="_blank"> </a></div> </div> <p>অনুসন্ধানে জানা যায়, কেপি বসু সড়কে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের জমি দখল করে বহুতল বিপণি বিতান গড়ে তোলেন মিন্টু। মহিষাকুণ্ডু এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির জমি দখল করে আমোদ-প্রমোদের জন্য বানিয়েছেন বাগান বাড়ি। শহরের আরাপপুর এলাকায় একাধিক জায়গায় বানিয়েছেন আলিশান বাড়ি। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডি, উত্তরা ও বারিধারা এলাকায় তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জুলুমের টাকায় শুধু দেশেই নয় বিদেশেও মিন্টু গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে রয়েছে একাধিক বাড়ি, কয়েকশত ট্রাকসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যেও বাড়ি রয়েছে তার। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুদক একাধিক মামলা করে মিন্টুর বিরুদ্ধে। তবে তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক।</p> <p>জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ‘রাজনীতিতে কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চাইতেন না মিন্টু। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির যে কেউ তার বিরুদ্ধে গেলেই ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ভয়াবহ নির্যাতন চালাতেন। পৌরসভার মেয়র থাকাকালে সালিস বিচার, পৌরসভার নানা প্রকল্প, শহরের বিভিন্ন এলাকায় দোকান বেচাকেনাসহ নানা অপকর্ম করে শত শত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। তার এসব অপকর্মের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p>জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জুলুম-নির্যাতন করে মিন্টু এত সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার এসব সম্পদ দ্রুত জব্দ করার জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে।’</p> <p>কারাগারে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।</p>