<p>মা ইলিশ রক্ষায় আজ শনিবার মধ্যরাত থেকে টানা ২২ দিন সারা দেশে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতেও শুরু হচ্ছে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ সময় মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে মাছের ঘাটগুলোতে মাইকিং করা হয়।</p> <p>তা ছাড়া সব ঘাটে সতর্কতামূলক ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার এ সময় জেলেদের ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাংক ও এনজিওগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।</p> <p>জানা যায়, প্রজনন মৌসুম হিসেবে মা ইলিশ রক্ষায় টানা ২২ দিন সারা দেশে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এ সময়ে ভোলার মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার ও তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। </p> <p>মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে গত কয়েক দিন ধরেই মাছঘাটগুলোতে সচেতনতামূলক মাইকিং ও ঘাটে ঘাটে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। জেলে ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে করা হয়েছে সভা ও সেমিনার। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলেদের ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাংক ও এনজিওগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এদিকে নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোলার জেলেরা আড়তদারের দাদন ও এনজিওর ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার জেলেদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ দিলেও সব জেলে এ চাল পায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। যেসব জেলে সরকারি বরাদ্দের চাল পায়, তারাও এক সপ্তাহের বেশি এ চাল দিয়ে সংসার চালাতে পারেন না। ফলে অভিযানের সময় ঋণের বোঝা আরো ভারি হয় জেলেদের।</p> <p>ভোলা সদর উপজেলার জেলে মো. লিটন মাঝি জানান, এ বছর নদীতে তেমন মাছের দেখা মেলেনি। ১৫-২০ দিন আগ থেকে কিছু মাছ ধরা পড়তেছে। তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যা দিয়ে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ যুগিয়ে সপ্তাহে দুই হাজার টাকা এনজিওর কিস্তি দিতে হয়। এতে করে অনেকটা টানাপড়েনের মধ্যেই দিন যাচ্ছে। এর মধ্যে সরকার ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান দিয়েছে। এই ২২ দিনে নতুন করে আরো দেনা করতে হবে। সরকার যে চাল দেয় তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৮-৯ দিন চলে। </p> <p>উপজেলার ধনিয়া-তুলাতুলি এলাকার ষাটোর্ধ্ব জেলে ফারুক মাঝি জানান, আগের তুলনায় এখন নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। তাই পুরো বছর ঋণের বোঝা টানতে হয় তার। নদীতে যে মাছ পাওয়া যায় তা বিক্রি করে সংসার চালানো কঠিন। এর মধ্যে আবার সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় নতুন করে আবার ধারদেনা করতে হয়। তা ছাড়া জেলে পেশা ছাড়া আর কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে নদীতে মাছ শিকার করেই জীবিকা চলে তার। একসময় নিজের ট্রলার থাকলেও ধারদেনা করতে করতে এখন অন্যের ট্রলারে থেকে মাছ শিকার করতে হয়।</p> <p>একই এলাকার শফিউল্লাহ মাঝি জানান, তিনি ৪০ বছর ধরে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীতে মাছ শিকার করে স্ত্রী ছেলে-সন্তান নিয়ে তিন বেলা খেয়ে কোনোমতে দিন চলে। প্রায় চার দশক নদীতে মাছ শিকার করেও কিছুই করতে পারেননি। উল্টো বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে বছরে তিন-চারবার নদীতে অভিযান থাকে। অন্য সময়েও নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। তাই জেলেদের পুরো বছর ধরেই ঋণের বোঝা টানতে হয়। দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হওয়ায় অনেক জেলে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ রকম চলতে থাকলে একসময় জেলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন যারা আছেন, তারা বাধ্য হয়েই এ পেশা ধরে রেখেছেন। তাই সরকারকে জেলেদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।</p> <p>ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব কালের কণ্ঠকে জানান, ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে আগামী ২২ দিন ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মা-ইলিশ রক্ষা অভিযান চলবে। এ অভিযান সফল করতে ও জেলেদের সচেতন রাখতে বিভিন্ন ঘাটে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। অভিযান সফল হলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।</p> <p>তিনি আরো জানান, ভোলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে ২২ দিনের অভিযানকালে এক লাখ ৪০ হাজার ৯০০ জেলের জন্য ২৫ কেজি করে মোট ৩৫২২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ চাল জেলেদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের কিস্তি স্থগিত করতে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও এনজিওর কাছে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। <br />  </p>