<p>ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ভোগাই, চেল্লাখালী ও সোমেশ্বরী নদীর উজানের পানি কমলেও ভাটিতে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার পাঁচটি উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। </p> <p>রবিবার (৬ আগস্ট) বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিনে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই ভাইসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। </p> <p>এ তথ্য নিশ্চিত করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়া আন্ধারুপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬৬), নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও  আলমগীর হোসেন (১৬), বাঘবেড় বালুরচরের অমিজা খাতুন (৪৫), পোড়াগাওঁ ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন (৭০), নকলার উরফা ইউনিয়নে কুড়েকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (৫০) ঢলের পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধাকুড়া থেকে একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।  </p> <p>স্থানীয়রা জানায়, গতকাল থেকে নকলা পৌর এলাকাসহ পুরো উপজেলাই প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চাল, সিলিং ও মাচায়। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অনেকে জানায়, তিন দিন ধরে বন্যা হলেও এখনও তারা ত্রাণ পাননি । </p> <p>বন্যার্ত এলাকার ঘুরে জানা গেছে, বন্যার পানিতে তলিয়ে ও বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ সড়ক। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল।  </p> <p>বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি। প্রায় এক হাজার পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। পাঁচ শতাধিক পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ভাসছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। </p> <p>উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। সরকারিভাবে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাচ্ছে না  অনেক বন্যার্ত মানুষ। ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খুললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ অনেকের।</p> <p>নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন আট হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে। </p> <p>জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাড়ে ৯০০ হেক্টর জমির সবজি পানিতে নিমজ্জিত।  </p> <p>শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাকিবুজ্জামান খান বলেন, আগামীকাল সোমবারের ভেতর কমবে সব নদীর পানি, উন্নতি হবে বন্যা পরিস্থিতির। তিনি জানান, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালীতে বিপৎসীমার ২৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর।  </p> <p>বন্যার পানিতে আটকে পড়াদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা দিতে অভিযান পরিচালনা করছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিএনপি, জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি সংগঠন। </p>