<p>কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত মঙ্গলবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য হাসিবুর রশীদের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে উপাচার্য, তাঁর পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, প্রক্টরসহ ২০ জনকে অবরুদ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করা হলে মামলা হবে।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরীফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, হামলার সময় সেখানে তিনিসহ উপাচার্য হাসিবুর রশীদ, তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. মজির উদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানসহ ২০ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নিচতলায় হামলা চালিয়ে আসবাবসহ মালপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।</p> <p>প্রাণ রক্ষার্থে দোতলায় একটি কক্ষে উপাচার্যসহ ২০ জন আশ্রয় নেন। এরই মধ্যে দোতলায় বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বোমাসহ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।</p> <p>বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক বহিরাগত সন্ত্রাসী উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালায়। তারা বাসার সামনে দুটি প্রাইভেট কারসহ ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আতঙ্কে সবাই উপাচার্যসহ তাঁর বাসভবনের দোতলায় আশ্রয় নেন। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অবশেষে সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ ও র‌্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছন দিক দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে উদ্ধার করে গাড়িতে করে রংপুর সার্কিট হাউসে নিয়ে যায়। আর ১০ মিনিট দেরি হলেই তাঁদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হতো।</p> <p>বেরোবির উপাচার্য হাসিবুর রশীদ বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে মিটিং করছিলাম। আমার স্ত্রী দোতলায় আমার বেডরুমে ছিলেন। হঠাৎ বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ফোন করছিলাম। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী আর ফায়ার সার্ভিস আমার বাড়ির চারদিকে অবস্থান করা সন্ত্রাসী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের কারণে আসতে পারছিল না। পরে বাধ্য হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফোন করি। তিনি রিসিভ করলে আমার স্ত্রীসহ ২০ জনের জীবন রক্ষা এবং উদ্ধারের জন্য অনুরোধ জানাই। এরপর পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের একটি দল আমাদের রক্ষা করে। ফলে আমরা নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাই।’</p> <p>এ বিষয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে রংপুর র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক কমান্ডার কামরুল হাসান বলেন, উপাচার্যসহ ২০ জন আটকা পড়ে আছেন—এমন খবর পাওয়ার পর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসিসহ বাইরের একটি রাস্তা দিয়ে ভিসির বাসভবনে যান। এ সময় যৌথভাবে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বলেন, পুলিশ ও র‌্যাব যৌথভাবে কমান্ডো স্টাইলে অভিযান চালিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। গানপাউডার ব্যবহার করেছিল হামলাকারীরা। অগ্নিসংযোগ ও হামলাকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় খুব দ্রুত মামলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।</p>