<p style="text-align: justify;">খাগড়াছড়ির বাসিন্দা নিপু ত্রিপুরা সংসারের এক দুঃসময়ে জানতে পারেন একজন সফল মাশরুম চাষির কথা। তাঁর কাছ থেকে কাজ শিখে এখন তিনি নিজের সচ্ছলতা নিশ্চিত করা ছাড়াও অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন</p> <p style="text-align: justify;">খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ঠাকুরছড়া নতুনবাজার এলাকার বাসিন্দা নিপু ত্রিপুরা। পার্বত্য এলাকার নিম্নবিত্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর মতোই অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল তাঁর জীবন। স্বামী-স্ত্রী মিলে ছোট একটি মুদি দোকান চালাতেন, যা করোনার সময় বন্ধ হয়ে যায়।</p> <p style="text-align: justify;">এমন সংকটময় সময়েই স্বপ্ন ও বাস্তবতার সঠিক সংযোগে একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন নিপু ত্রিপুরা। তাঁকে আলো দেখানোর কৃতিত্বটা নতুন যুগের গণ ও সামাজিক মাধ্যমের।</p> <p style="text-align: justify;">পারিবারিক মুদি দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিপু ত্রিপুরা সংসার চালানো নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন। এমন সময়ই একদিন ইউটিউবে মাগুরার বাবুল আক্তারের মাশরুম চাষ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখেন।</p> <p style="text-align: justify;">সেটি দেখে নিজেও মাশরুম চাষ করে জীবিকা উপার্জনের কথা ভাবেন নিপু। খাগড়াছড়িতে খোঁজখবর করে কোথাও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পেলেন না। দমে না গিয়ে বাবুল আক্তারের কাছে মাগুরাতেই ছুটে গেলেন নিপু। বাবুলের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় ফিরে শুরু করলেন মাশরুম চাষ।</p> <p style="text-align: justify;">স্বামীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সূচনা হয় তাঁর উদ্যোগটির। এক পর্যায়ে অবশ্য স্পনের (যা থেকে মাশরুম জন্মায়) সমস্যায় পড়েছিলেন। তবে একসময় তা কাটিয়ে ওঠেন। প্রথম বছরেই মাশরুমের বীজ বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা আয় করেন নিপু। এখন প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার স্পন উৎপাদন করছেন তিনি। এরই মধ্যেই নিপুর খামারে কাজ করছেন আটজন নারী শ্রমিক।</p> <p style="text-align: justify;">নিপু ত্রিপুরা ২০ জন সদস্য নিয়ে গড়ে তুলেছেন সমবায় সমিতি। এই সমিতির মাধ্যমে নিজ গ্রামের নারীদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। নিপু এখন স্বপ্ন দেখছেন মাশরুমের মাতৃজাত উৎপাদনের। তিনি জানালেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাতৃজাত আনতে হওয়ায় অনেক সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়।</p> <p style="text-align: justify;">বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাশরুম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ফসল। এটি একটি পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধি গুণসম্পন্ন খাবার। চাষ করার জন্য কোনো আবাদি জমিরও প্রয়োজন হয় না। অনুৎপাদনশীল, পতিত জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়াও সারা বছর এর চাষের জন্য উপযোগী।</p> <p style="text-align: justify;">মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, দেশে এটি উৎপাদনের পরিধি দ্রুত বড় হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাশরুম উৎপাদিত হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের কৃষিতে মাশরুম রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।</p> <p> </p>