<p>মা-বাবার যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং তাঁদের নিজস্ব সম্পত্তি না থাকে, তবে সন্তানরা সামর্থ্যবান হলে তাদের ওপর মা-বাবার চিকিৎসা করানো আবশ্যক। কেননা চিকিৎসা ভরণ-পোষণের অন্তর্ভুক্ত। যদি সব সন্তান সামর্থ্যবান না হয়, বরং একজন হয়, তাহলে সামর্থ্যবান সন্তানের ওপর তাঁদের চিকিৎসার খরচ বহন করা আবশ্যক। আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, ‘কারো মা-বাবা, সন্তান; ছেলে হোক, মেয়ে হোক গরিব হলে এবং ওই ব্যক্তির কাছে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এতে বিচারক (রাষ্ট্র) তাকে বাধ্য করতে পারবে।’ (আল মুগনি : ৮/১৬৮)</p> <p>মা-বাবা ও সন্তানের ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক। এটা কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। সন্তানের খরচ নির্বাহের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদের দিয়ে দাও।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)</p> <p>আর মা-বাবার ব্যয় নির্বাহের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৩)</p> <p>ফকিহ আলেমরা বলেন, প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণ সদাচারের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি সর্বোত্তম যা ভক্ষণ করে তাহলো তার নিজের উপার্জন। নিশ্চয়ই ব্যক্তির সন্তান তার উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ)</p> <p>আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, আলেমরা এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, যে দরিদ্র পিতামাতার উপার্জন নেই, সম্পদও নেই, সন্তানের সম্পদ থেকে তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ফরজ।</p> <p>একইভাবে আলেমরা সবাই একমত হয়েছেন যে যেসব শিশুসন্তানের সম্পদ নেই পিতার ওপর তাদের ভরণ-পোষণ দেওয়া ফরজ। কেননা সন্তান তারই অংশ এবং সে তার পিতারই অংশ। তাই ব্যক্তির নিজের জন্য ও নিজ পরিবারের জন্য খরচ করা যেমন আবশ্যক, তেমনি তার অংশ ও মূলের জন্যও খরচ করা আবশ্যক। (আল মুগনি : ৮/১৭১)</p> <p>যদি সন্তানদের সম্পদ না থাকে এবং তারা মায়ের চিকিৎসার জন্য ঋণ করে : যদি তারা ঋণ নেওয়ার সময় নিয়ত করে যে তারা এ ঋণ ফেরত নেবে ও দাবি করবে তাহলে তারা ফেরত নিতে পারবে। মা সামর্থ্যবান হলে তারা যে ঋণ নিয়েছে মা থেকে সে ঋণ চাইতে পারবে কিংবা মায়ের মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে সেটা ফেরত নিতে পারবে। আর যদি তারা ফেরত নেওয়া ও দাবি করার নিয়ত না করে থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে তারা স্বেচ্ছায় ভালো কাজকারী হিসেবে গণ্য হবে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের দাবি করার অধিকার থাকবে না। (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১৬/২০৫)</p> <p>বাবার কাছ থেকে পাওয়া মায়ের প্রাপ্য সম্পদ থেকে তাঁর মৃত্যুর আগে ও পরে ঋণ পরিশোধের বিধান ওপরের মতোই। অর্থাৎ মায়ের সামর্থ্য থাকলে সে নিজের অর্থে চিকিৎসা করাবে। তাঁর সামর্থ্য না থাকলে সন্তানরা সামর্থ্য অনুসারে তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে। যদি তাদের ঋণ করতে হয় এবং তা মায়ের সম্পদ থেকে কর্তনের নিয়তে গ্রহণ করে, তাহলে তারা এই সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করবে। নতুবা নিজেরাই সুযোগমতো তা পরিশোধ করবে।</p> <p>আল্লাহই সর্ববিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন।</p>