<p style="text-align:justify">সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এমনটাই বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে।</p> <p style="text-align:justify">‘তিন বিচারপতির অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ তথ্য দিয়ে গত ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রতিবেদন প্রচার করে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। এই প্রতিবেদন ‘মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে ওই দিন রাতেই বিজ্ঞপ্তি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।</p> <p style="text-align:justify">গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘তিন বিচারপতির অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ মর্মে খবরটি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় সম্প্রচারিত হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের গোচরীভূত হয়েছে। (সংবিধানের) ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও এবং কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতির তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান থাকলেও এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কোনো বিচারপতি সম্পর্কে অভিযোগ পাঠানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেল কর্তৃক সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন।’</p> <p style="text-align:justify">সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত ২০ অক্টোবর রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। সাত বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। পরে এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সেই আবেদন নিষ্পত্তি করে রায় দেন। এ রায়ের ফলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফেরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে।</p> <p style="text-align:justify">১৯৭২ সালের সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে।</p> <p style="text-align:justify">২০১৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট।</p> <p style="text-align:justify">এই সংশোধনী বাতিল হওয়ায় সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ছয়টি উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়। যার ৩ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হবে প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারককে নিয়ে। কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন, অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজে অসমর্থ হন অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধেই যদি তদন্ত চলে, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কাজ করবেন।</p> <p style="text-align:justify">কাউন্সিলের দায়িত্ব সম্পর্কে ৪ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিচারকদের জন্য পালনীয় একটি আচরণবিধি কাউন্সিল নির্ধারণ করে দেবে এবং একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে তদন্ত করবে।</p> <p style="text-align:justify">৫ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে রাষ্ট্রপতি যদি জানতে পারেন যে, কোনো বিচারক শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাহলে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি তদন্ত করে ফল জানানোর নির্দেশ দিতে পারেন।</p> <p style="text-align:justify">তদন্ত করার পর কাউন্সিল যদি সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বা তার অসমর্থতার প্রমাণ পায় এবং বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানায়, তাহলে ৬ নম্বর দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি ওই বিচারককে অপসারণের আদেশ দেবেন। আর ৭ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, তদন্তের ক্ষেত্রে কাউন্সিলই নিজের কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা ধারণ করবে।</p>