<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগের তথ্যাদি ও চিত্র পর্যালোচনা করলে এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানা যায়, যা মারাত্মক উদ্বেগের। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ। এই সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ২০৪৫ সালে দুই কোটি ২০ লাখে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে, যদিও বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নিজস্ব সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস নেই বলে মনে করা হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ২৫ জনের বেশি এই রোগে আক্রান্ত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর অর্থ হলো, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা তিন কোটির বেশি! কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সারা বাংলাদেশে কমবেশি ৮০ লাখ ডায়াবেটিক রোগী ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। আর বাকিরা চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যায়। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী জানেই না যে তারা এ রোগে আক্রান্ত, যেহেতু তাদের কোনো লক্ষণ থাকে না। ফলে প্রথমবার যখন তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, তখন শতকরা ৩০ থেকে ৪০ জন কোনো না কোনো জটিলতা নিয়ে আসে। আবার যারা এরই মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের মধ্যে শতকরা ১০ জনের বেশি চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। দীর্ঘদিন রক্তের শর্করা অনিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে শতকরা ৬০ জন এই রোগের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগতে থাকে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, কিডনি জটিলতা, চোখের সমস্যা, পায়ের পচন অন্যতম। অন্যদিকে তাদের গড় আয়ু সাধারণ লোকের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ বছর কমে যায়। এর মানে হচ্ছে, ডায়াবেটিক রোগীর কর্মজীবন ১০ থেকে ১৫ বছর কমে যায়। সব কিছু মিলিয়ে ডায়াবেটিক রোগীর পারিবারিক, মানসিক. সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মারাত্মক। শতকরা ৩৬ জন রোগী এই রোগজনিত মর্মপীড়ায় ভোগে, যাকে আমরা ডায়াবেটিস বিষণ্নতা বা ডায়াবেটিস ডিসট্রেস বলে থাকি। রোগ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই হতাশাভাব চলে আসে। শতকরা ৬০ জন রোগীর ভেতরে জটিলতার বিষয় নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্র শতকরা ২৫ জন এই রোগটিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে একজন রোগীকে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়, যা তার জন্য পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য হলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডায়াবেটিস : সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সুস্বাস্থ্য বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? সুস্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা। দৈহিক দুর্দশা ও মানসিক মর্মপীড়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দৈহিক সুস্থতা না থাকলে মর্মপীড়া বেড়ে যায়। মানসিক অবস্থা সুস্থ না থাকলে দৈহিক সুস্থতা ধরে রাখাও কঠিন। উদাহণস্বরূপ বলা যায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অনেক ডায়াবেটিক রোগী হীনম্মন্যতায় ভোগে, বিষণ্নতায় ভোগে। অস্থির মনোভাব চলে আসে। সচল থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কোনো কাজে মনোযোগ থাকে না। পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের কাছে থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে আড়ালে রাখে। অন্যদিকে মানসিক অবসাদ, অস্থিরতা, হীনম্মন্যতা ও মর্মপীড়া শর্করা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপগুলোতে প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত করে। স্বাস্থ্যকর খাবারদাবারের পরিবর্তে অস্বাস্থ্যকর খাবারদাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম অনিয়মিত হয়ে পড়ে। নিয়মিত রক্তের শর্করার পরিমাপ করা হয়ে ওঠে না। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়ে ওঠে না। পর্যাপ্ত নিদ্রায়ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এসবই শর্করা নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। পক্ষান্তরে দৈহিক দুর্দশায় পড়ে এবং সব কিছু মিলিয়ে সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব হয় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে দৈহিক দুর্বলতা, ভালো না লাগা, আলস্য ও বিষণ্নতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শারীরিক দুর্দশা ও মানসিক মর্মপীড়া কর্মজীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা অতীব জরুরি। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং আত্মপরিচর্যার বিষয়ে রোগীকে সচেষ্ট হতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত নিদ্রা ও অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীকে তাই মনোবল বাড়িয়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো সঠিক নিয়মে করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা দানকারীদেরও সহমর্মিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য রোগী ও চিকিৎসাসেবা দানকারী উভয়ের ভূমিকা অপরিহার্য। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দানকারী যেন সারা দেশের মানুষ সহজে ও সুলভে পেতে পারে সে ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের আরো সক্রিয় হতে হবে, যাতে রোগীরা দেশের যেকোনো এলাকায় বসেই চিকিৎসাসেবা পেতে পারে। সহানুভূতি ও সহমর্মিতার সঙ্গে ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে, যাতে রোগীরা সব সময় তাদের রক্তের শর্করা সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক, সমাজের অন্যান্য মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রত্যেকের সহমর্মিতার মনোভাব নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই সম্ভব ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ কারণেই এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যাদের ডায়াবেটিস হয়নি, এই রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে তারা নিজেদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা গেলে সুস্বাস্থ্য রক্ষা করাও সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মগুলো নিজেকে মানতে হবে এবং অন্যদের মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসুন, সবাই মিলে নিজের সুস্বাস্থ্য ও ডায়াবেটিক রোগীদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ। পরিচালক (একাডেমি), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল</span></span></span></span></p> <p> </p>