<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঔপনিবেশিক ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ প্রশাসক স্যার চার্লস মেটক্যাফ (১৭৮৫-১৮৪৬) ভারতবর্ষের গ্রামীণ সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি চমৎকার মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর মতে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রাম সম্প্রদায়গুলো ছোট ছোট প্রজাতন্ত্রের মতো। তাদের যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলো তারা হাতের কাছেই পায়। ফলে বাইরের যোগাযোগের ওপর তাদের খুব একটা নির্ভর করতে হয় না। রাজবংশের পর রাজবংশের পতন হয়, বিপ্লবের পর বিপ্লব সফল হয়; হিন্দু, পাঠান, মোগল, মারাঠা, শিখ ও ব্রিটিশরা পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় আসে, কিন্তু গ্রাম সম্প্রদায়গুলো একই রকম থেকে যায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ৫৩ বছরের এই বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেকবার সরকার বদল হয়েছে। মেটক্যাফ বর্ণিত আমাদের নিশ্চল গ্রামগুলোতেও গত কয়েক দশকে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের সোনার হরিণটি অধরাই থেকে যাচ্ছে! </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে দেড় দশকেরও বেশি সময়ের কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই মাস পার হয়ে গেল। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণও দুই মাস পেরিয়েছে, কিন্তু যেসব কারণে সাধারণ মানুষ বিগত সরকারের ওপর সংক্ষুব্ধ ছিল, তার অনেক কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির প্রসঙ্গ। প্রচলিত প্রায় সব ছাত্রসংগঠন কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা তাদের মাতৃসংগঠনের পক্ষে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাঠিয়াল বাহিনী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে কাজ করে বলেও সমালোচনা আছে। সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন হলে তো কথাই নেই।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত দুই মাসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হত্যা মামলা। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকের স্বজন হত্যা মামলা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশও মামলা করেছে। ৫ আগস্টের আগে করা মামলাগুলোতে প্রধানত বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। ওই সব মামলায়ই এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আবার ৫ আগস্টের পর থেকে যতগুলো হত্যা মামলা হয়েছে, প্রায় সবগুলোর আসামি সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। গণমাধ্যমে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রে বাদী জানেনই না তাঁর মামলার আসামি কারা! বিগত আওয়ামী লীগ আমলে অনেক গায়েবি মামলায় মৃত ব্যক্তি, কারাগারে আটক ও বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদেরও আসামি করা হতো। এসব আসামির প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত। এখন ঘটছে উল্টোটা। এসব ঢালাও মামলা নিয়ে এরই মধ্যে আইনজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। যদি হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করতে হয়, প্রকৃত দোষীকে শাস্তির আওতায় আনতে হয়, তাহলে ফরমায়েশি, গতানুগতিক এবং </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাট-কপি-পেস্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> টাইপের মামলা বন্ধ করা জরুরি। এ ধরনের মামলা একদিকে যেমন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলা বাণিজ্যের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সুযোগ করে দেয়, তেমনি ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার বঞ্চিত হন এবং প্রকৃত অপরাধী বিচার ও শাস্তির বাইরে থেকে যায়। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত ছিল আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব। লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংক দখল, ঋণখেলাপির যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে বের হওয়া খুব সহজ নয়। কিন্তু সরকার যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে নির্মোহভাবে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে, তবে তা সত্যি দেশের টেকসই অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হলে কেবল রাজনীতিবিদ নয়, আমলা, পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেই সোচ্চার হতে হবে। জাতীয় সংসদে বিভিন্ন সময় অর্থপাচার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একাধিক সংসদ সদস্য বলেছেন, কানাডার বেগমপাড়ায় রাজনীতিবিদ অপেক্ষা আমলাদের ঘরবাড়ি বেশি। অসংখ্য কর্মকর্তা অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিপুল পরিমাণ সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতি রোধে পক্ষপাতহীন, দৃষ্টান্তমূলক ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় </span></span></span></span></p> <p>ihusain1979@gmail.com</p> <p> </p>