<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের জুন মাস থেকে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এটিই প্রথম বন্ধ করা নয়। গত শতাব্দীর আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকবারই নানা কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের নিয়োগে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করে। ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকাকালে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মধ্যে এক অনৈতিক প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে শত শত বাংলাদেশি কর্মী তাঁদের নিয়োগকর্তার কোনো হদিস না পেয়ে কুয়ালালামপুরের রাস্তায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার ২০০৯ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া স্থগিত করে। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জি টু জি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পদ্ধতিতে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হলে স্থগিতাদেশ উঠে যায়। ওই পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়। ১০ হাজারের মতো কর্মী যাওয়ার পরপরই সেই কার্যক্রমটি ২০১৫ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ২০১৬ সালে ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিয়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জি টু জি প্লাস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় তুন মাহাথিরের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে অত্যধিক অভিবাসন ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশ থেকে ওই পদ্ধতিতে কর্মী নেওয়া স্থগিত হয়। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ওই দুই বছরে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের (মালয়েশিয়ার দৈনিক দ্য স্টার পত্রিকা যার নাম দিয়েছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংগঠিত পাচার সিন্ডিকেট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">) পকেটে হাজার হাজার কোটি টাকা ঢুকেছিল, যা মূলত বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় পাচার করা হয়েছিল।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে কি" height="405" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.July/22-08-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="500" />পরবর্তী সময়ে বায়রার সব সদস্যকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ না দিয়ে ২০১৬ সালের সমঝোতা স্মারকের অনুসরণে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নির্ধারিত রিক্রুটিং এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের ব্যবস্থা রেখে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আগে ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেট থাকলেও এবার হলো ১০০টি এজেন্সির সিন্ডিকেট। নতুন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসে আমাদের সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেইস থেকে কর্মীদের পাঠানো হবে এবং অভিবাসনের খরচ একজন শ্রমিকের দুই থেকে তিন মাসের বেতনের বেশি হবে না। দুই পক্ষ কোনো ধরনের গ্রুপিং বা সিন্ডিকেট করতে দেবে না। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে সেটি আর হয়ে ওঠেনি, উভয় প্রান্তের সক্রিয় সহযোগিতায় কর্মীদের শোষণ করার একটি বড় আখড়ায় পরিণত হয় এই সেক্টরটি। কারণ বাংলাদেশি কর্মীরা কোন কোন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রেখে দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার; এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল নীরব দর্শক।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলে যে বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৩ জন কর্মীকে অনুমতি দেয়, যাঁদের মধ্যে চার লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ জন কর্মীকে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। অর্থাৎ চার লাখ ৭৬ হাজারের বেশি কর্মী ওই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় যেতে সক্ষম হন। মে মাসের পর থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে যাঁরা টাকা জমা দিয়েও যেতে পারেননি, তাঁদের টাকা অবশ্যই ফেরত দেওয়া হবে। আর এ উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কর্মীরা কি এজেন্সিকে পরিশোধিত সব টাকা ফেরত পাবেন? তাঁরা কিভাবে প্রমাণ করবেন যে কত টাকা তাঁরা এজেন্সিকে দিয়েছেন? তাঁদের কাছে কোনো প্রমাণ (টাকা প্রদানের রসিদ) আছে বলে মনে হয় না। কোনো প্রমাণ না থাকলে তাঁদের মৌখিক দাবির সত্যতা এজেন্সিগুলো কি মেনে নেবে? যেহেতু সম্পূর্ণ অর্থই নগদ পরিশোধ করা হয়েছে, তাই ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রসিদও কর্মীদের কাছে থাকার কথা নয়। আর এজেন্সিগুলো স্বীকার না করলে সরকারের পক্ষে সেই অর্থ আদায় করা কখনোই সম্ভব হবে না। জানি না, তদন্ত কমিটি বিষয়টিতে এ পর্যন্ত কোনো কিছু করতে পেরেছে কি না, নাকি বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষয়টি গুরুত্বহীন হয়েই পড়ে রয়েছে? তাহলে প্রায় ১৭ হাজার কর্মী কি তাঁদের টাকা আর ফেরত পাবেন না? উল্লেখ্য, সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা হলেও প্রত্যেককে চার থেকে ছয় লাখ টাকা দিতে হয়েছে এজেন্সিকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়া চার লাখ ৭৬ হাজারের বেশি কর্মীকে অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু শোষণ করা হয়েছে তার একটি চিত্র কয়েক দিন আগে স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি বাবদ প্রত্যেক কর্মীকে দেড় লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে সিন্ডিকেটকে। তারপর অন্যান্য খরচ ধরে গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শুধু বাংলাদেশ থেকেই ২০০ বিলিয়ন টাকার লেনদেন হয়েছে। ওই অর্থ এ দেশের গরিব কর্মীদের শোষণ করে সংগৃহীত অর্থ। আমরা জানি, ওই অর্থ কখনো অফিশিয়াল চ্যানেলে যায় না, অবৈধ পথে পাঠানো হয়ে থাকে বৈদেশিক মুদ্রায়। এমনকি এজেন্সিগুলোর আয়করের নথিতেও ওই অর্থ দেখানো হয় না। মূলত বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের আরেকটি উৎস হয়ে আছে এটি। ২০১৬ সালের পর থেকে হিসাব করলে কত লাখ কোটি টাকা এভাবে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে তার একটি বিবরণ পাওয়া যেতে পারে। আমাদের অর্থনীতির জন্য তা যে মোটেই শুভ নয়, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এ ব্যাপারে কেউ উৎসাহী হবে বলে মনেও হয় না। কারণ ওই সব সিন্ডিকেটের সদস্যরা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সরকারের অত্যন্ত কাছের লোকজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসলে দরিদ্র বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থের কথা কেউ ভাবে না। নানা আশ্বাস আর রঙিন স্বপ্নের কথা বলে তাঁদের শোষণের বেড়াজালের মধ্যেই ঘোরানো হয়। তাহলে সরকার কি কোনো দিনই অভিবাসী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সির স্বার্থ সংরক্ষণ করে একটি অভিবাসীবান্ধব নিয়োগব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারবে না? মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কি আর কখনো সিন্ডিকেটের হাত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে না? নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সরকারকে এগিয়ে আসতেই হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত মে মাসের পর থেকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দিলেও আমাদের বিশ্বাস, আগের মতোই আবার মালয়েশিয়া তাদের প্রয়োজনেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। তাই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মালয়েশিয়াকে বোঝাতে হবে, নিশ্চয়তা দিতে হবে, যাতে কর্মীদের শোষণ করা না হয়। আমাদের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সম্পৃক্ত করে ২০১২ সালের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জি টু জি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পদ্ধতির অনুসরণে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয়ে যেন কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন তেমন পদ্ধতির সমঝোতা করা দুই দেশের স্বার্থকেই সংরক্ষণ করবে। তবে সিন্ডিকেটকে যেন কোনোভাবেই আগামী নিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিশেষে একটি বিষয় না বললেই নয়, শুধু অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করে দিলেই সরকারের দায়িত্ব পালন করা হয় না, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর অভিবাসীবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করা ছাড়া স্বল্প অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করা যেমন কখনো সম্ভব নয়, তেমনি মালয়েশিয়ার মতো অন্যান্য দেশে উদ্ভূত অভিবাসী কর্মীদের দুর্দশা ও পীড়ন থেকে বাঁচানোর কোনো পথও খোলা নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব</span></span></span></span></p>