<p>আশির দশক থেকে খুলনা মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির অফিসটি পরিচালিত হচ্ছে সরকারি জায়গায়। নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলায় এর অবস্থান। সরকারের ডিসিআর সম্পত্তিতে প্রতিবছর রাজস্ব দিয়েই পরিচালিত হয়ে আসছিল অফিসটি। কিন্তু ওই অফিসও দখলের চেষ্টা করা হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগের আমলে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের সেখানে বহুতল ভবন করার কথা ছিল, যে কারণে এক ব্যক্তিকে মালিক সাজিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে তাঁর কাছ থেকে দলিল করে নেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। বিষয়টি আগে খুব গোপনে করা হলেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তা প্রকাশ্যে আসে, বিশেষ করে ৪ সেপ্টেম্বর খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক অভিযোগে বিষয়টি খোলাশা হয়। এ ছাড়া গত ৩০ অক্টোবর খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকেও জাতীয় পার্টির অফিসটি অবৈধ জায়গায় বলে দাবি করেন দৌলতপুরের মো. আজিজুর রহমান মৃধা। যদিও ৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন থেকে এর ব্যাখ্যা দিয়ে জেলা জাপার সভাপতি শফিকুল আলম মধু বলেন, ‘সরকারি ডিসিআরের সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’</p> <p>জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দেওয়া জাপার অভিযোগ ও আজিজুর রহমানের সংবাদ সম্মেলনের পর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য, যাতে স্পষ্ট হয়, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন না হলে হয়তো এত দিনে ওই সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যেত শেখ পরিবারের কাছে। সেখানে উঠত বহুতল ভবন। মুছে যেত ৪০ বছরের ইতিহাস।</p> <p>নগর জাপার সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া অভিযোগে ওই সম্পত্তি ভিপি তালিকা থেকে বাদ না দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া তিনি সম্প্রতি খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকারি সম্পত্তিতে বহুতল ভবন করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে মামলা করে তৎকালীন সরকারের প্রভাবে উচ্চ আদালত থেকে তথাকথিত রায় নিয়ে এখন ব্যক্তিমালিকানা জমি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি হলেও তারা যেহেতু প্রায় অর্ধশত বছর ধরে নিয়মিত রাজস্ব দিয়ে ওই সম্পত্তি ব্যবহার করে আসছে, সেহেতু অন্য কেউ ওই জমি অবৈধভাবে নিতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।</p> <p>পক্ষান্তরে আজিজুর রহমান মৃধা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নগরীর ডাকবাংলা মোড়ের বেবি স্ট্যান্ড সংলগ্ন ২১ শতক জমির মালিক তিনি। এমনকি তিনি ওই জমির খাজনাও দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে অবস্থিত নিউ রহমানিয়া হোটেলসহ আরো যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর ভাড়াও তিনি গ্রহণ করেন। অথচ জাতীয় পার্টি সেখানে অবৈধভাবে অবস্থান করছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে ওই জমি তাঁর বরাবরে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।</p> <p>অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট আর জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিলেও ৫ আগস্টের আগে তাঁর সঙ্গে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।</p> <p>খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কোনো আবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে কি না সেটি তিনি এখনো জানেন না। তবে আবেদন পাওয়া গেলে তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।</p> <p> </p>