<p><strong>ভেলার ফল বা মার্কিং নাট এক ধরনের ফল, যা কাপড় ধোয়ার আগে চিহ্নিত করার কাজে লাগানো হতো। এই বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হতো বলেই ফলটি ‘মার্কিং বাদাম’ বা মার্কিং নাট নামে পরিচিত। গাছটির প্রচলিত নাম ভেলা হলেও আসলে জলাশয়ে ভেসে বেড়ানো ভেলার সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভেলা মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ</strong></p> <p> </p> <p>ইউরোপে একসময় ধোপাদের কাপড় ধোয়ার কাজে ‘মার্কিং নাট’ নামে এক ধরনের ফলের কালি ব্যবহৃত হতো। কাপড় ধোয়ার আগে চিহ্নিত করার জন্যই মূলত ফলটি কাজে লাগানো হতো। না হয় কাপড়গুলো আলাদা করে চিনতে সমস্যা হতো। এই বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হতো বলেই ফলটি ‘মার্কিং বাদাম’ বা মার্কিং নাট নামে পরিচিত। সেই মার্কিং নাট যে আমাদের দেশে ভেলার ফল হিসেবে পরিচিত তা জেনেছি অনেক পরে। প্রায় বছর পাঁচেক আগে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে গাছটি প্রথম দেখি। অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান তখন ভেলা নামের সুদর্শন এই বৃক্ষটি আমাকে দেখালেন। এই গার্ডেনটি আমার দেখা অতি সমৃদ্ধ একটি আঞ্চলিক উদ্যান। বাগানটি সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এবং অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান। বনের এই গাছ আগে আর কোথাও দেখিনি।</p> <p>গাছটির প্রচলিত নাম ভেলা হলেও আসলে জলাশয়ে ভেসে বেড়ানো ভেলার সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে শুধু ভেলা নয়, গাছটি স্থানীয়ভাবে বেলা, বেডা এবং ভেলাটুকু নামেও পরিচিত। দেশের বৃহত্তর সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের বনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই উদ্ভিদ সমতলে বেশ দুর্লভ। বড় আকৃতির সুদর্শন পাতা দেখে গাছটি খুব সহজেই চেনা যায়।</p> <p>ভেলা (Semecarpus anacardium) মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষ। এই গাছের প্রশাখা, পত্রবৃন্তক এবং পাতা ক্ষুদ্র রোমে আবৃত থাকে। পাতা দীর্ঘ, চওড়া, পুরু এবং আগার দিকে গোলাকার। কচি পাতার রং কাঁচা সবুজ হলেও পরিণত পাতা দেখতে কালচে সবুজ। পাতার বৃন্ত স্থূলকায় এবং আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা। ফুল ফোটার মৌসুম বসন্তকাল। ফুলের বিন্যাস অসম, বিক্ষিপ্ত এবং স্থূলকায় ধরনের। ফুল মিশ্রবাসী, ছোট ও গুচ্ছিত। দল বৃতির তুলনায় বেশ বড়, আয়তাকার এবং সবুজাভ সাদা রঙের। ফলগুলো ডালের আগায় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকে। সাধারণত মে-জুন মাসের দিকে এই গাছের ফল পাকতে শুরু করে। ফল তির্যকভাবে আয়তাকার এবং আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। পাকা ফলের ওপরের অংশ কালচে এবং নিচের দিকটা কমলা রঙের। ফলের নিচের অংশ খাওয়া যায়। ওপরের অংশ থেকে এক ধরনের আঠালো রস পাওয়া যায়। এই রস একসময় আমাদের দেশেও ধোপারা কাপড় চিহ্নিত করার কালি হিসেবে ব্যবহার করত।</p> <p> </p> <p> </p>