<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জন্ম নিয়ন্ত্রণ নতুন কোনো বিষয় নয়। যুগে যুগে এর ব্যবহার ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণের নীরব আন্দোলন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মুখরোচক কিছু স্লোগান সর্বত্র লক্ষণীয়। প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। সংগত কারণেই পরিবার পরিকল্পনা ও সন্তান জন্মদানের বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানা প্রয়োজন। এসংক্রান্ত মৌলিক কিছু নীতি উল্লেখ করা হলো</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কোরআনের নির্দেশনা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মানুষ সন্তান হত্যা করত। আধুনিক যুগে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভ্রূণ হত্যা ওই যুগে সন্তানকে জীবন্ত সমাধিস্থ করার নামান্তর। তা ছাড়া অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাও অনুচিত। কারণ রিজিকের একমাত্র মালিক আল্লাহ। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তোমরা নিজেদের সন্তানদের অভাবের ভয়ে হত্যা কোরো না। তাদের রিজিক আমিই দিয়ে থাকি এবং তোমাদেরও। তাদের হত্যা করা মহাপাপ।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩১) </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইসলামে শিশু হত্যাকে কবিরা গুনাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী স্থির করা; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম, এটা তো বড় গুনাহ বটে। এরপর কোনটি? তিনি বলেন, আপন সন্তানকে এ আশঙ্কায় হত্যা করা যে সে তোমার আহারের সঙ্গী হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(তিরমিজি, হাদিস : ৩১৮২; আবু দাউদ, হাদিস : ২০০০)</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুন্নাহর দৃষ্টিভঙ্গি</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ছিল আজল। (সংগমকালে বীর্য স্ত্রী যোনির বাইরে স্খলন করা) এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে তিনি নির্দেশ দেননি। সরাসরি নিষেধ ও করেননি। তবে একটি হাদিসে এটাকে গুপ্ত হত্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। জুদামা বিনতে ওয়াহব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন কিছুসংখ্যক লোকের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হলাম। তিনি তখন বলেছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী নারীর সঙ্গে সংগম করতে নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এ অবস্থায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্থার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে তারা স্তন্যদায়িনীর সঙ্গে সংগম করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান-সন্ততির কোনো ক্ষতি করে না। তারপর লোকেরা তাঁকে আজল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলো গোপন হত্যা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩৪) </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইচ্ছা ছিল উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এর তাগিদ তিনি দিয়েছেন। মাকাল ইবনে ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলে, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদাসম্পন্ন রমণীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে কোনো সন্তান প্রসব করে না (বন্ধ্যা)। আমি কি তাকে বিবাহ করব? তিনি বলেন, না। অতঃপর সে ব্যক্তি দ্বিতীয়বার এসে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। পরে তৃতীয়বার সে ব্যক্তি এলে তিনি বলেন, তোমরা এমন স্ত্রীলোকদের বিবাহ করবে, যারা স্বামীদের অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান প্রসব করে। কেননা আমি (কিয়ামতের দিন) তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে (পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর) গর্ব প্রকাশ করব। (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪৬)</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মৌলিকভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত তিনটি পদ্ধতি পাওয়া যায়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এক. স্থায়ী ব্যবস্থা : জন্ম</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজননক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পুরুষের জন্য ভ্যাসেকটমি ও মহিলাদের জন্য লাইগেশন। এ ব্যবস্থায় অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষ বা নারীর সন্তান দেওয়ার ও নেওয়ার ব্যবস্থা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি গ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ। এতে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম। কিন্তু আমাদের কোনো কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদের খাসি হতে নিষেধ করলেন এবং কোনো মহিলার সঙ্গে একখানা কাপড়ের বিনিময়ে হলেও শাদী করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদের এই আয়াত পাঠ করে শোনালেন, হে মুমিনরা! আল্লাহ যে পবিত্র জিনিসগুলো তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম কোরো না এবং সীমা লঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (বুখারি, হাদিস : ৪৭০৯)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুই. মেয়াদি ব্যবস্থা : যেমন</span></span></span></strong><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></strong><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নির্ধারিত</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> মেয়াদের জন্য ইনজেকশন, নিরাপদকাল মেনে চলা, আইইউডি ব্যবহার করা ইত্যাদি। এই পদ্ধতি গ্রহণ করা মাকরুহ তাহরিমি। আর মাকরুহ তাহরিমি হারামের কাছাকাছি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিন. সাময়িক ব্যবস্থা : যেমন</span></span></span></strong><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></strong><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কনডম</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ব্যবহার করা, জন্ম নিরোধক পিল ব্যবহার করা ইত্যাদি। এই পদ্ধতি যদি স্ত্রী বা সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দ্বিনদার ডাক্তারের পরামর্শক্রমে গ্রহণ করা হয় তাহলে তা জায়েজ। এই পদ্ধতি যদি বিলাসিতার উদ্দেশে গ্রহণ করা হয় এই ভেবে যে সন্তান কম হলে ঝামেলা কম হবে, ছিমছাম থাকা যাবে ইত্যাদি, তাহলে স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে তা গ্রহণ করা জায়েজ, তবে এটা অনুত্তম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(আহকামে জিন্দেগী : ৫৫৮) </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মুসলিম দম্পতিদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োজনে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>