<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জয়পুরহাটের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নিদর্শন হিন্দা-কসবা জামে মসজিদ। অনন্য কারুকাজ মসজিদটিকে দারুণ সুখ্যাতি এনে দিয়েছে। জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের হিন্দা গ্রামে হিন্দা-কসবা জামে মসজিদের অবস্থান। জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে যার দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। হিন্দা-কসবা জামে মসজিদে একসঙ্গে ৩০০ থেকে ৪০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। এ ছাড়া দর্শনার্থী নারী মুসল্লিদের জন্য আছে নামাজ আদায়ের পৃথক ব্যবস্থা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা যায়, কুমিল্লার বাগমারী পীর খ্যাত মাওলানা আবদুল গফুর চিশতি (রহ.)-এর নির্দেশে ১৩৬৫ বাংলা সনে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তিনি নিজেই মসজিদের নকশা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধান করেন তাঁরই শিষ্য ও খলিফা মাওলানা আবদুল খালেক চিশতি (রহ.)। মাওলানা আবদুল গফুর চিশতি (রহ.) চিরকুমার ছিলেন। তিনি জয়পুরহাট জেলায় হিন্দা-কসবা মসজিদ ছাড়াও আরো একাধিক ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ এবং প্রায় ২৩ ফুট প্রস্থ হিন্দা-কসবা জামে মসজিদ নির্মাণে রয়েছে মোগল স্থাপত্যরীতির ছোঁয়া। মোগলরীতি অনুসরণ করে এর অবকাঠামো ও দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে রঙিন কাচ, চীনামাটির টুকরা ও মোজাইক। কারুকাজ ও নকশায় মোগল ও সুলতানি আমলের স্থানীয় স্থাপত্য রীতির শৈল্পিক সমন্বয় ও মিশ্রণ দেখা যায়। তবে মোগল আমলের নির্মিত বেশির ভাগ মসজিদে দেখা যায় বাইরের দেয়ালে পোড়ামাটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই মসজিদের বাইরের আস্তরণে কাচ ও চীনামাটির টুকরা ব্যবহার করে বিভিন্ন নকশা করা হয়েছে। এতে মসজিদের জৌলুস বেড়েছে কয়েক গুণ। কেননা সূর্যের আলোর স্পর্শে হিন্দা-কসবা মসজিদ আলোকপিণ্ডে পরিণত হয়। অবশ্য সতেরো থেকে উনিশ শতকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত মসজিদে রঙিন, চীনামাটির টুকরা ও মোজাইকের ব্যবহার দেখা যায়, যা একটি স্বতন্ত্র ধারার জন্ম দিয়েছিল। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চিনি মসজিদ, তারা মসজিদ, কাস্বাবটুলী মসজিদ ইত্যাদি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিন্দা-কসবা মসজিদে রয়েছে পাঁচটি গম্বুজ এবং উত্তর পাশে ৪০ ফুট উঁচু মিনার। মিনারের নিচে একটি ছোট কক্ষ আছে। সেখান থেকে আজান দেওয়া হয়। ছোট চারটি গম্বুজ নির্মাণে কোনো রড বা লোহা ব্যবহার করা হয়নি। বর্তমানে মাইকে আজান প্রচার করা হলেও একসময় মিনারের ওপরে উঠেই আজান দেওয়া হতো। বলা হয়ে থাকে, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের সঙ্গে মিল রেখে মসজিদে পাঁচটি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে মাঝের বড় গম্বুজটি ঈমানের প্রতীকী অর্থ বহন করে। উঁচু মিনার ধারণ করে আছে ইসলামের মাহাত্ম্য, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের তাৎপর্য। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী হিন্দা-কসবা মসজিদ পরিদর্শন করে। দর্শনার্থীদের জন্য মসজিদের পাশেই খাবার হোটেল ও গাড়ি রাখার জায়গা আছে, যা দেশের অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ ও স্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। স্থানীয়দের ভেতরেও মসজিদের প্রতি রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি, বিশেষত চিশতিয়া তরিকার মুরিদ ও ভক্তদের কাছে হিন্দা-কসবা মসজিদ তীর্থতুল্য। স্থানীয় মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের অনেকেই মনোবাসনা পূরণের জন্য মসজিদের নামে মানত করে থাকে (যদিও এ ধরনের মানতকে ইসলাম নিরুৎসাহ করে)। প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা হিন্দা-কসবা মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দর্শনার্থীদের আকর্ষণের আরেকটি দিক হলো মসজিদের পূর্বপাশে অবস্থিত শাহ সুলতান বলখি (রহ.)-এর চারজন শিষ্যের মাজার। শাহ সুলতান বলখি (রহ.) খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলা অঞ্চলে আসা একজন প্রভাবশালী ধর্ম প্রচারক, পীর ও সুফি সাধক। জানা যায়, তিনি আফগানিস্তানের বলখ অঞ্চলের রাজত্ব ছেড়ে ধর্ম প্রচারে বের হন। এ জন্য তাঁকে শাহ সুলতান বলখি বলা হয়। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে তিনি মারা যান এবং এখানেই সমাহিত হন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, জাতীয় তথ্য বাতায়ন/ক্ষেতলাল উপজেলা, ট্যুরিস্ট ডটপুলিশ ডটগভ ডটবিডি ও উইকিপিডিয়া</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>