<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাহেনুর বেগম থাকেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউপির বাজে সন্দ্বীপ গ্রামে। এক মেয়ে ও এক নাতি মিলিয়ে আট সদস্যের সংসার তার। স্বামী নেছার হাওলাদার এবং ছেলে রাকিব, শামীম ও তামীমের পেশা মাছ ধরা, বিশেষ করে ইলিশ শিকার। বছর দুই আগে ঝড়ে তাদের জাল-নৌকা ডুবে গেছে। এরপর ক্রমে দেনায় জড়িয়ে পড়ে পরিবারটি। বর্তমানে মাহেনুর বেগমের নামে আছে সাত লাখ ২০ হাজার টাকার ঋণ। ব্র্যাক, আশা, একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক), পদক্ষেপ, বাউফল উন্নয়নসহ মোট আটটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আবারও নৌকা-জাল গড়েছেন। স্বামী ও ছেলেরা যা ইলিশ পায়; তার আয় দিয়ে সংসারও চালাতে হয় আবার ঋণের কিস্তিও দিতে হয়। সপ্তাহে প্রায় ১১ হাজার টাকা কিস্তি আসে এই পরিবারের। কিন্তু ওই পরিমাণ আয় তো হয় না। ফলে আরো প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ করে ফেলে পরিবারটি। কালের কণ্ঠকে মাহেনুর বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাগো পরিবারের কারো জীবনে কোনো সাধ-আহ্লাদ নাই! বেয়ান (সকাল) অইলেই আমাগো সবাইর কিস্তির চিন্তায় মাতা ঘোরে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নেছার উদ্দিন বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নদীতে আগের মতো মাছ নাই, আয়ও নাই। কিন্তু খরচে তো মাফ নাই। আমার পরিবারের আটজন সদস্যের সবাই গড়ে দুই লাখ ১৫ হাজার টাহা কইরা দেনা। মাছ ধরা ছাড়া আয়-রোজগারের আর কোনো রাস্তা খোলা নাই। এ্যাহন যেই জালে দুইডা মাছ পাওন যায়, ওই জাল কিন্যা হেইয়াই বাই। বৈধ-অবৈধ এ্যাহন আর ইসাব করতে পারি না বাবা।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই গ্রামের জেলে সুজন সরদারের স্ত্রী মরিয়ম বেগমের নামেও লাখ পাঁচেক টাকা ঋণ। ব্র্যাক, আশা ও সংগ্রাম</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই তিন এনজিও থেকেই তার নামে ঋণ নেওয়া হেয়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা। সপ্তাহে কিস্তি আসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এর বাইরেও আরো দুই লাখ টাকা ধারদেনা করা আছে। মরিয়ম বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাল-নৌকার ওপর সংসার। কিন্তু নদীতে মাছ নাই। দিন দিন দেনা বাড়তেয়াছে। কী করমু ভাই, আমাগো জীবন তো এই রোহমই!</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আরো কথা হয় ওই এলাকার জেলে সাদ্দাম হোসেন, নিজাম খাঁ, শাকিল এবং দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তারাও প্রত্যেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে বিভিন্ন এনজিওর ঋণের বোঝা বইছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খোঁজ করে জানা গেছে, পটুয়াখালী অঞ্চলে মাছের কারবারে দাদন প্রথা আগের মতো আর নেই। নদী-সাগরে মাছের আকাল শুরু হওয়ায় আড়তদারি ব্যবসা আগের মতো রমরমা নয়; তাই আড়তদাররা এ জেলায় দাদনের কারবার থেকে এক রকম হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। এর বদলে বেড়ে গেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। জেলেরা এখন সাপ্তাহিক কিস্তির শর্তে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে জীবন-জীবিকা  চালানোর সংগ্রাম করছেন। কিন্তু মাছ শিকারে যথেষ্ট আয় না হওয়ায় আরো উৎস থেকে ধারদেনা করতেই হয় তাদের। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলার পাঞ্জুপাড়া গ্রামের জেলে মো. মহিবুল্লাহর পাঁচ লাখ টাকা ঋণ, হোসেনপাড়া গ্রামের খোকন খানের দুই লাখ টাকা, মুসুল্লিয়াবাদ গ্রামের মো. মাহাতাব আকনের ১০ লাখ টাকা, ঝাউবন এলাকার আলী মাতুব্বরের তিন লাখ টাকা এবং পাঞ্জুপাড়া গ্রামের মো. কিবরিয়া মুসল্লির দুই লাখ টাকা ঋণ আছে। কালের কণ্ঠকে মহিবুল্লাহ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কারেন্ট জাল, ভুলা জাল, চিংড়ি জাল এবং বাঁধা জালে অগণিত ইলিশের পোনা চাপলি মারা পড়ে। এসব অবৈধ জাল ব্যবহার করে জাইল্লারা ঠেইক্কা, অভাবে পইরগা। যে এলাকায় যাইবেন, সব জাইল্লারাই লোনে জর্জরিত।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইলিশ সংরক্ষণে বিভিন্ন মেয়াদে শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই সময়গুলোয় জেলেদের কাছ থেকে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি আদায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে না। যথারীতি কিস্তি আদায়ের কাজ চালু রাখা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এনজিও আশার বাউফল শাখা ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জেলেদের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কিস্তি না আদায়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে আমাদের থেকে জেলেদের ওপর কোনো চাপ নাই। কোনো জেলে যদি একটা কিস্তি দিতে অপারগ হন, আমরা তাতে চাপ সৃষ্টি করি না। গ্রাহকের অসুবিধা আমরা দেখি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই দাবি করেন ব্র্যাক বাউফল শাখার ব্যবস্থাপক আক্কাস আলী; পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সরফরাজ হোসেন; উদ্দীপনের ব্যবস্থাপক শ্যামল মণ্ডল এবং বিআরডিবির আরডিও মাহবুবা বেগম।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে জেলেরা জানান, নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করলে পরে ঋণ নিতে গেলে তখন ওরা ঝামেলা করে। দুই-চার বছর আগে ঘরের টিন খুলে নিয়ে যেত; মেয়েদের গহনা খুলে নিত; অসম্মান করত। তবে এখন এসব করে না।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>