<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁর গদ্য তীক্ষ ও কাব্যময়। তাতে ইতিহাসের যন্ত্রণাবিদ্ধ বিষয়ের সঙ্গে মুখোমুখি বোঝাপড়ার প্রচেষ্টা আছে। তাঁর গদ্যে আছে মানবজীবনের ভঙ্গুরতার কথাও। শরীরের সঙ্গে আত্মার, জীবিতের সঙ্গে মৃতের যোগাযোগ নিয়ে এক অনন্য সচেতনতা কাজ করে তাঁর লেখায়। আর কাব্যময় ও নিরীক্ষাধর্মী লেখনশৈলী সমকালীন গদ্যের দুনিয়ায় তাঁকে নিয়ে গেছে একজন উদ্ভাবকের কাতারে। দক্ষিণ কোরিয়ার কবি ও কথাসাহিত্যিক হান কাং সম্পর্কে এভাবেই বর্ণনা দিয়েছে নোবেল কমিটি। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান লেখকের হাতে নোবেল" height="166" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/11-10-2024/7800.jpg" style="float:left" width="164" />গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় স্টকহোমের গামলা-স্তনের স্টক এক্সচেঞ্জ হলে সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সেক্রেটারি ম্যাটস মালম সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে হান কাংয়ের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চমকে দিতে আমি হান কাংকে বেশ কিছুক্ষণ ফোনে ধরে রাখতে পেরেছিলাম। মনে হয়েছে, তিনি এই খবরের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি অন্যান্য দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন কাটাচ্ছিলেন এবং সবেমাত্র তাঁর ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৫৪ বছর বয়সী হান কাংয়ের লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৯৪ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সাময়িকীতে একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কারলেকেন টু ইয়েসু</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামের একটি ছোটগল্পের সংকলন বের হয়; এর মধ্য দিয়েই তাঁর গদ্য পাঠকের সামনে আসে। পরে তিনি দীর্ঘাকার গদ্য লিখতে শুরু করেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দ্য ভেজেটারিয়ান</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> তাঁর সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থের জন্য ২০১৬ সালে ম্যানবুকার পুরস্কার পান তিনি। এ উপন্যাসে হান কাং মানুষের নিষ্ঠুরতায় আতঙ্কিত এক তরুণীর </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বৃক্ষের মতো</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন। উপন্যাসের কাহিনিতে দেখা যায়, ওই তরুণী তার ঐতিহ্যগত বিবাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এর আগে সে বিদ্রোহী ধরনের কেউ ছিল না। কিন্তু তার নিজের শরীর, তার যৌনতা এবং তার বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে সে গাছ হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং নিরামিষভোজী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার কেউ নোবেল পুরস্কার পেলেন। হান কাং এমন একটি নাম, যা নোবেল তালিকায় স্থান পেলেও এ বছরের সম্ভাব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলোর মধ্যে ছিল না। নোবেল কমিটি বলেছে, তিনি এমন একজন, যিনি সংগীত ও শিল্পকলার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মানুষের জীবনের নানা দিক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে কাংয়ের অনুসন্ধিত্সু মন। তাই তাঁর কাজকে কোনো সীমানায় আটকে ফেলা যায় না। সহিংসতা, দুঃখ-কষ্ট ও পিতৃতন্ত্রের মতো নানা বিষয় উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হান কাংয়ের জন্ম ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজুতে। তাঁর শৈশব অনিবার্যভাবে ১৯৮০ সালের গোয়াংজু বিদ্রোহের দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল। এটি একটি গঠনমূলক ঘটনা, যা তিনি তাঁর বিস্ময়কর উপন্যাস </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিউম্যান অ্যাক্টস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-এ উপস্থাপন করার প্রয়াস পেয়েছেন। ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের নৃশংস দমন-পীড়নের পর যে যন্ত্রণাদায়ক সময় চলছিল, তার চিত্র তুলে ধরেছেন গবেষণায়, যে গণহত্যাকে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ক্ষত</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হিসেবে বর্ণনা করেছেন হান কাং। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাহিত্যবোদ্ধাদের মতে, হান কাংয়ের সাহিত্যিক পদ্ধতি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অস্ত্রোপচারের</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নির্ভুল এক দৃষ্টান্ত। তিনি মানবিক আত্মাকে ব্যবচ্ছেদ করেন, তার ছেঁড়া প্রান্তের দিকে পলকহীনভাবে তাকান এবং এর চারপাশে সূক্ষ্ম সুতার আখ্যান বুনেন। তাঁর মর্মস্পর্শী গল্প বলা সাংস্কৃতিক সীমানা অতিক্রম করে। বেদনা, ক্ষতি, আকাঙ্ক্ষা ও মুক্তির সর্বজনীন থিমগুলোর সঙ্গে অনবরত সংলাপে মত্ত থাকেন তিনি। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কমনীয়তা ও তপস্যার সূক্ষ্মতা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> তাঁর গদ্যশৈলীকে অনন্য করে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হান কাংয়ের বইয়ের পাতা অব্যক্ত আবেগে যেন কম্পমান। তিনি তাঁর লেখায় অবচেতন ট্রমাকে এমন স্পষ্টতা ও সরলতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন যে পাঠকরা নিজেকে তাঁর চরিত্রগুলোর অভ্যন্তরীণ জগতে সহজেই স্থানান্তর করতে সক্ষম হয়। কাংয়ের সাহিত্য যেন জীবন্ত আয়নার ওপরে অবয়বের প্রতিফলন, যা শুধু ব্যক্তিগত সংগ্রামকেই প্রতিফলিত করে না, সমষ্টিগত স্মৃতি এবং জাতীয় পরিচয়ের ওপরও আলোকপাত করে সমানভাবে। তাঁর গ্রন্থের চরিত্রগুলো প্রায়ই স্বায়ত্তশাসনের সন্ধান করে। সীমাবদ্ধ সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার সঙ্গে যেন লড়াই করে এবং নন-কনফর্মিটির মূল্য অন্বেষণ করে। তাঁর লেখা মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতাবাদ, দর্শন ও পরাবাস্তববাদী উপাদানগুলোর সুতায় বোনা ও আবদ্ধ, যা পড়তে গেলে ভাবের স্তরগুলোর ওপর যেন আরো একটি অদৃশ্য স্তর প্রকাশ করে। কিন্তু হান কাং একজন দক্ষ ঔপন্যাসিকের চেয়েও বেশি কিছু। তাঁকে একজন </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাহিত্যিক উদ্ভাবক</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বললে অত্যুক্তি করা হবে না। দক্ষতার মাধ্যমে তিনি শৈলীর কনভেনশনগুলোর দিক বদলে দেন এবং আখ্যানের গঠন প্রক্রিয়াকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেন। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দ্য হোয়াইট বুক</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-এ সেভাবেই তিনি জীবন ও মৃত্যুকে রং ও রূপের প্রিজমের মাধ্যমে প্রতিফলিত করেছেন, বইয়ের প্রতিটি পাতায়, অস্তিত্বের গভীর ধ্যানে!</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হান কাংকে নোবেল পুরস্কার দেওয়াটা সুইডিশ একাডেমির দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিকে স্বীকৃতির প্রতিই প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দেয়। সামপ্রতিক বছরগুলোতে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্যারাস্টাইট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাপী কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস ইত্যাদি দেশটির সংস্কৃতির জয়জয়কার দেখে বিশ্বব্যাপী দর্শকরা মুগ্ধ। এখন সাহিত্যও চলে এলো কেন্দ্রবিন্দুতে, যা তার প্রাণবন্ত শিল্পকলার ল্যান্ডস্কেপকে তুলে ধরল উচ্চতার এক ভিন্ন মাত্রায়। এ ছাড়া হান কাংকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করায় এশিয়ার নারী লেখকদের জন্য আরেকটি মাইলফলক যোগ হলো। এটি আন্তর্জাতিক সাহিত্যের চেনাজানা গলিগুলোতে প্রান্তিক কণ্ঠস্বরগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জনও।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্বজুড়ে সাহিত্য অনুরাগীরা বছরের শেষের দিকে স্টকহোমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে হান কাংকে তাঁর নোবেল পদক গ্রহণ করতে দেখবে, যা রূপান্তরকারী শক্তি হিসাবে সাহিত্যের জন্য ব্যক্তিগত অর্জন এবং যৌথ বিজয় উভয়ই চিহ্নিত করবে। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>