<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকার মিরপুর আর ইলিয়াস মোল্লা যেন সমার্থক দুটি নাম। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ইলিয়াস মোল্লার প্রভাব বলয় ছাড়া মিরপুরকে যেন ভাবাই যেত না। দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে চারবার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন। সাংবিধানিক এই পদের সুযোগে নানা অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। পুরো সংসদীয় এলাকাকে তিনি তাঁর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাকার খামার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বানিয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="ইলিয়াস মোল্লার ‘টাকার খামার’" height="298" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/27-09-2024/12312/00000-.jpg" style="float:left" width="343" />মিরপুর, রূপনগর, পল্লবীসহ ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা-১৬</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এই আসন এলাকার  সরকারি কোনো ফাঁকা জায়গা তাঁর লোলুপ নজর এড়ায়নি। দখল করে তৈরি করেছেন বস্তি, নয়তো দোকান বা অস্থায়ী মার্কেট। এসব বস্তি, দোকান বা মার্কেটে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ওয়াসার পানিরও সংযোগ দিয়েছেন,  নিজ অনুগতদের দিয়ে প্রতি মাসের ভাড়া বা চাঁদা তুলেছেন। মিরপুরে বিল, ঝিলের অঘোষিত মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্য অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র ক্যাডার তৈরি করে বিভিন্ন বস্তি, মার্কেট, দোকান ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত  চাঁদা তুলেছেন ইলিয়াস  মোল্লা। তাঁর কাছে অসহায় ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় অন্য নেতাকর্মীরাও। বাড়ির বৈঠকখানায় বসাতেন সালিস বৈঠক। আদালতের আদলে বিচার করতেন। তাঁর শাসন বা বিচার মানতে গড়িমসি করলে নিজ হাতে মারধর করতেন। মামলা করে  পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিতেন। আবার কারো পক্ষে নিজ আদালতের রায় দেওয়ার জন্য সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষও নিতেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লাঠি ও দেশীয় নানা ধরনের অস্ত্রসহ কয়েক ট্রাক উচ্ছৃঙ্খল কর্মী পাঠিয়েছিলেন এই ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। তারা পিটিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেছিল। এ ছাড়া মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল ইলিয়াস মোল্লার সশস্ত্র কর্মী বাহিনীর সদস্যরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে ৫ আগস্ট থেকে ইলিয়াস মোল্লা পলাতক। ইলিয়াস মোল্লার দখলদারির খবর সংগ্রহের সময় একাধিকবার মিরপুর-১২ নম্বর সেকশনে তাঁর বাড়িতে গেলে গেট বন্ধ পাওয়া যায়। ভেতরে নিস্তব্ধতা, অন্ধকার।  পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন জানান, ৫ আগস্টের পর ওই বাড়িতে আর কাউকে দেখা যায়নি। কয়েকজন বলেন, আশপাশের কোনো বাসায় হয়তো পালিয়ে আছেন। নয়তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। ইলিয়াস মোল্লার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিনে জানা যায়, টানা ১৫ বছর ইলিয়াস মোল্লার দাপটে অতিষ্ঠ মানুষের মনে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। তাঁর সম্পর্কে প্রকাশ্যে এখনো কথা বলতে সাহস করছেন না তাঁরা। তবে আড়ালে বা নাম প্রকাশ না করার নিশ্চয়তা দেওয়ায় মুখ খুলেছেন অনেকেই।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলিয়াস মোল্লার সম্পদ</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৮ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করা  হলফনামায় ইলিয়াস মোল্লার মোট বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল  দুই কোটি ৭৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের হলফনামায় তাঁর আয় দেখানো হয় তিন কোটি ১১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ব্যবসা হিসেবে মাছ চাষ প্রকল্প দেখানো হয়েছিল। এরপর দেখানো হয় একটি অ্যাগ্রো ফার্ম, একটি মৎস্য খামার ও একটি বিপণিবিতান। দেখিয়েছেন দুটি বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট। একটি করে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। তাঁর নামে ৬০ ভরি ও স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন ৩২ ভরি সোনা। তবে স্থানীয়রা এই সম্পদের হিসাব দেখে বলছেন, এটা হাস্যকর। তাঁরা বলছেন, এই সম্পদের তুলনায় তাঁর কয়েক হাজার গুণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। যার হিসাব তিনি দেখাননি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস দুয়ারীপাড়া</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভুক্তভোগীরা ও স্থানীয়রা জানান, ইলিয়াস মোল্লার আয়ের বড় একটি উৎস হলো দুয়ারীপাড়া। দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩টি প্লট নিয়ে ওয়াকফ এস্টেট ও গৃহায়ণ অধিদপ্তরের মধ্যে বিরোধ ছিল। ছিল একাধিক মামলা। সুযোগটি কাজে লাগান ইলিয়াস মোল্লা। এই জায়গা ১৯৮১ সালে গৃহায়ণ অধিদপ্তর সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেন। কিন্তু এই জমি ওয়াকফ এস্টেটের দাবি করে দখলে নেওয়া হয়, যার নেতৃত্বে ছিল মোল্লা পরিবার। ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে এটি নিয়ন্ত্রণে নেন ইলিয়াস মোল্লা। এখানকার জমি কোনো দলিল ছাড়াই কেনাবেচা হতো। যার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। জমি থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে বছরে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিতেন। এ ছাড়া এখানে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিল বাবদ এবং ভাড়ার নামে টাকা তুলতেন। সরকারি তহবিলে এই টাকা জমা হতো না, ঢুকত ইলিয়াস মোল্লা ও তাঁর অনুসারীদের পকেটে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জলিল নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, চারবার উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে প্রতিবারই প্রতিটি প্লট থেকে দুই থেকে চার লাখ করে  মোট  ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইলিয়াস মোল্লা। এ ছাড়া এলাকার মার্কেট, ছোট দোকান, ফুটপাতের দোকান থেকেও তাঁর অনুগতরা নিয়মিত টাকা তুলত। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয়রা আরো জানান, ওয়াকফ এস্টেট নামে এই জায়গাটিতে ৪৭৪টি প্লট ছিল। এসব প্লটে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা ছিল সাত হাজারের বেশি। যত প্লট বাড়ানো হবে তত  টাকা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ধারণা নিয়ে ৪৭৪টি প্লটকে ভেঙে সাত শতাধিক প্লট বানানো হয়। প্লটগুলো যাঁদের দখলে ছিল তাঁরা ছিলেন  ইলিয়াস মোল্লার কাছে জিম্মি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুলতান নামের এক ব্যক্তি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে থাকি। আমাকে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও একবার উচ্ছেদ করেছে। এরপর ইলিয়াস মোল্লা আমাদের সবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে আবার দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপর আরো কয়েকবার উচ্ছেদ এবং দখল বুঝিয়ে দিয়ে প্রতিবারই টাকা আদায় করেছেন। ২০১৯ সালে এই জমি উদ্ধার করে বরাদ্দকারীদের মধ্যে বুঝিয়ে দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। এরপর সেখানে কিছু ভবন তৈরি করা হয়েছে। তবে ইলিয়াস মোল্লার দখলের ভয় এখনো দূর হয়নি।  নির্ধারিতসংখ্যক প্লটের বাইরেও কয়েক শ প্লট বানিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দুয়ারীপাড়ার যত দোকান রয়েছে, সবটা থেকেই তাঁর অনুগতরা নিয়মিত চাঁদা তুলত। ৫ আগস্টের পর তাদের আর দেখা মিলছে না।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফুটপাতেও মালিকানা</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা ১৬ আসন এলাকার সেনানিবাস ও ডিওএইচএস বাদে সব রাস্তার ফুটপাতের মালিক যেন ইলিয়াস মোল্লা ও তাঁর অনুসারীরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার ওপর ও ফুটপাতে যারা অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসত তাদের কাছ থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। রূপনগর, দোয়ারীপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বর সেকশন, পলাশনগর,  মানিকদি, ইস্টার্ন হাউজিং, আরামবাগ, মিরপুর-৬ নম্বর সেকশন, ৭ নম্বর সেকশন, বাউনিয়াসব সব পাড়া-মহাল্লার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকানের ভাড়া ইলিয়াস মোল্লার অনুগতদের দিতে হতো। এসব কাজে পাড়া-মহল্লাগুলো ছয় থেকে সাতজনের গ্রুপ যুক্ত ছিল। রূপনগর টিনশেড কলোনি নামে পরিচিত এলাকাটিও ইলিয়াস মোল্লার আয়ের অন্যতম উৎস।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>