<p>প্রথম শিশুর পর পরিবারে নতুন সন্তানের জন্ম হলে সে কিছুটা সংবেদনশীল, কখনো হিংসাত্মক, কখনো আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে। মা-বাবার একক আদরের ভাগ অন্য শিশু নিয়ে নিচ্ছে এমন মনে হতে পারে শিশুটির। এ জন্য নতুন শিশু জন্ম নেওয়ার আগে থেকেই তাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বোঝাতে হবে, যে আসবে সে তার ভাই বা বোন হবে।</p> <p>দ্বিতীয় শিশু জন্মের পর পরিবারের প্রথম সন্তানের মনোজগতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। বড় সন্তানের কিছু আচরণে বিব্রত হন মা-বাবা। এ অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিক্যাল সার্ভিসেস, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট (কাউন্সেলিং) <strong>জোহরা আফরিন উপমা।</strong> লিখেছেন <strong>তানজিনা আকতারী</strong></p> <p>অনেক সময় বহু বছর পর সন্তান জন্ম হওয়ায় সেই সন্তানের প্রতি মা-বাবার মায়া ও ভালোবাসা বেশি কাজ করে। আবার যে পরিবারে কন্যাসন্তান বেশি সে পরিবারে পুত্রসন্তানের আগমনে ছোটে খুশির ফোয়ারা।</p> <p>একইভাবে পুত্রসন্তান বেশি আছে এমন পরিবারে কন্যাসন্তানের আগমনে আসে আনন্দের ঝিলিক। শুধু বড় সন্তান বা একজনকে আদর ও অন্যজনকে শাসন, অবহেলা আরেক সন্তানের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা এড়ানোর জন্য গর্ভাবস্থা থেকেই মা-বাবার উচিত প্রথম সন্তানটিকে নতুন সন্তানের আগমনের খবর জানানো। তাকে আদর করতে দেওয়া, কোলে নেওয়া, ছোট ছোট কাজ যেমন খাবার এগিয়ে দেওয়া, ডায়াপার এগিয়ে দেওয়ার কাজ দিতে হবে। শিশুটি যেন পরিবারে তার গুরুত্ব বুঝতে পারে, তাহলে তার মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।</p> <p>শিশুদের কোনো বিবাদ বা ভুল-বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে মা-বাবাকে সচেতনভাবে সঠিক বিচার বা ভাগবাঁটোয়ারা করতে হবে। নয়তো শিশু হীনম্মন্যতায় ভুগবে। পরিবারে নতুন শিশু এলে আগের শিশুর আদর, গুরুত্ব, মনোযোগ যেন না কমে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিক্যাল সার্ভিসেস, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট (কাউন্সেলিং) জোহরা আফরিন উপমা। </p> <p>তিনি  বলেন, ‘নতুন সন্তান আসা মানেই একটা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তন। প্রথম সন্তানের পর অন্য সন্তান আসছে এমন অবস্থার শুরু থেকেই পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। বাড়ির সদস্যরা পরস্পরের সহযোগী হলে মা-বাবা দুজনের জন্যই স্বস্তির। অসুস্থতা বা অন্য যেকোনো পরিস্থিতির কারণে মা-বাবা অনেক সময় সন্তানকে আদর-যত্ন করতে পারেন না। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কে কোন সন্তানের বেশি দেখভাল করবে, কোন সময়ে, কিভাবে করবে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।’ </p> <p>কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাবা এক সন্তানকে আর মা অন্য সন্তানকে নিয়ে আলাদা বিছানায় থাকতে বাধ্য হন। এমন ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো এক সন্তানকে দূরে রাখায় হীনম্মন্যতায় ভোগেন। সন্তানকে প্রথম ৫ বছর মা-বাবার সঙ্গে এক বিছানায় রাখতে পারলে ভালো। যদি সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে মা-বাবাকে বোঝাপড়া করে নিতে হবে, যাতে পরে কোনো প্রকার ‘গিল্টি ফিল’ না হয়। কখনো যাতে এমন মনে না হয়, ‘আমি আমার বড়/মেজো/ছোট সন্তানের প্রতি খারাপ আচরণ করেছি বা দূরে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। ন্যাপি পরিবর্তন, বুকের দুধ খাওয়ার জন্য ছোট সন্তানকে রাতে মায়ের সঙ্গে এক বিছানায় থাকতে হয়। </p> <p>এ সময় বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যের কাছে বড় সন্তানকে রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে দিনের অন্য সময় বড় শিশুটির জন্য ‘কোয়ালিটি টাইম’ বের করা জরুরি। এ সময়টুকু আদর, লেখাপড়া, স্পর্শ, চুমু, কাছে টেনে নেওয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে। যাতে সে আদরের অভাব বোধ করতে না পারে। নাহলে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। তার মনে হতে পারে, মা তাকে ভালোবাসে না, বুকে জড়িয়ে ঘুমায় না।</p> <p>তাই শিশুকে আদর করে পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রথম সন্তান জন্মের সময় একজন মায়ের মানসিক পরিপক্বতা এবং অভিজ্ঞতা দুটোরই ঘাটতি থাকে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের বেলায় সেসব পূর্ণতা পায়। শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে সে সাধারণত জেদি, একরোখা হয় না।</p> <p>স্বাভাবিকভাবেই শিশু কখনো কখনো মিথ্যা বলে বা অন্য শিশু সম্পর্কে অভিযোগ করে। শিশুকে এমন আচরণের জন্য তিরস্কার না করে বুঝিয়ে বললে সে নিজেকে শুধরেও নেয়।<br />  </p>