<p>উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার-সংগীত পরিচালক শেখ সাদী খান। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। তাকে বাংলাদেশের সংগীতের জাদুকর হিসেবেও অভিহিত করা হয়। গানের মধ্যদিয়ে এই সংগীত পরিচালক নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ‘ডাকে পাখি খোলো আঁখি’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ বা ‘জীবন মানে যন্ত্রণা নয় ফুলের বিছানা’—এ রকম অগণিত গানের স্রষ্টা তিনি। বিখ্যাত সংগীত পরিবারে তাঁর জন্ম। ৫৪ বছর ধরে গান করে যাচ্ছেন নিরলস। গুণী এই সংগীতজনের সঙ্গে কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p><strong>কেমন আছেন?</strong></p> <p>ভালো আছি সবার দোয়াতে। বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে ‘স্মৃতিময় গানগুলো’ আবার বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। এটির পরিকল্পনা ও গবেষণা আমার। গ্রন্থনায় আছেন গীতিকার মুন্সি ওয়াদুদ। অনুষ্ঠানটি নির্মাণে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ বেতারের গানও করছি নিয়মিত।</p> <p><strong>‘</strong><strong>স্মৃতিময় গানগুলো</strong><strong>’</strong><strong> অনুষ্ঠানটি মাঝখানে বন্ধ ছিল। কারণ কী?</strong></p> <p>এগুলো বলতে ভালো লাগে না। এমন একটা অনুষ্ঠান কেন বন্ধ থাকবে? যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা গানের বিবর্তন সম্পর্কে এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে জানতে পারে, যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গুণী শিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের হারিয়ে যাওয়া গান আবার তুলে ধরা হয়, অপ্রচলিত গানগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়—এই ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে লাভ কী? মাঝখানে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনেক অনিয়ম হয়েছে। আমিসহ কয়েকজন সেটার প্রতিবাদ করেছিলাম, আন্দোলন করেছিলাম। হয়তো সেটার ফলস্বরূপ অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়েছিল।</p> <p><strong>সেই প্রতিবাদ কি সফল হয়েছে?</strong></p> <p>না। আমরা এখনো প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছি। স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ কেন একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠানে থাকবে? কোনো কোনো শিল্পী প্রতিদিন গান করছেন আবার কোনো কোনো শিল্পী ছয় মাস, একবছর বেকার। এটা তো মানতে পারব না। আমার সংগীতে ক্যারিয়ার ৫৪ বছরের। প্রথম থেকেই আমি সত্যের পথে থেকেছি, এখনো থাকব। আমার হাত ধরে এ দেশে প্রথম চলচ্চিত্রে গান করেছেন মান্না দে, আশা ভোঁসলে, কুমার শানুরা। আমি এখনো নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই ‘স্মৃতিময় গানগুলো’ অনুষ্ঠানটি দেখলে বুঝতে পারবেন মাহমুদুননবী, ফারুক আহমেদ, আব্দুল জব্বারের মতো শিল্পীদের গানগুলো এখনকার নতুন শিল্পীদের কণ্ঠে তুলে দিচ্ছি। আমি তো ভালোর জন্য, মঙ্গলের জন্য কাজ করছি। এটাতে কেউ বাধা দিলে প্রতিবাদ করবই।</p> <p><strong>‘</strong><strong>একি খেলা চলছে হরদম</strong><strong>’</strong><strong> গানটির ইংরেজি ভার্সন করেছিলেন। এ রকম কালজয়ী অনেক গানের স্রষ্টা আপনি। সেগুলো</strong> <strong>নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?</strong></p> <p>নতুন প্রজন্মের কাছে আমার গানগুলো তুলে ধরতে চাই। আরেকটি গান আছে আমার ‘পথ ভেঙে পায়ে পায়ে সেখানে, চলো যাই শান্তির দ্বীপ জ্বলে যেখানে’, সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া, গানটি নতুন করে করা হচ্ছে ইংরেজিতে। এটা শান্তির গান। আমি তো শান্তি পুরস্কার পাব না। তবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে শান্তি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। গানটি সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতেই উদ্যোগটি নিয়েছি।</p> <p><strong>আপনার বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, আপনার ভাই ওস্তাদ বাহাদুর খাঁ</strong><strong>—</strong><strong>তিনজনই</strong> <strong>উপমহাদেশের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাঁদের তুলে ধরতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?</strong></p> <p>এটা তো আমার দায়িত্ব নয়। উপমহাদেশে কয়টি পরিবার আছে, যারা বংশপরম্পরায় এভাবে সংগীতের সঙ্গে জড়িত! আমাদের এখন সপ্তম জেনারেশন চলছে। এখনো পরিবারের সবাই সংগীতের সঙ্গে যুক্ত আছি। এটা তো সহজ ব্যাপার না। সরকারকে বুঝতে হবে। অবশ্য পরিবারের সদস্য হিসেবে আমারও কিছু করার আছে। সেটা নিয়ে পরিকল্পনাও সাজিয়েছি। শিগগির জানাব।</p> <p><strong>এক সময় অভিনয়েও নাম লিখিয়েছিলেন...</strong></p> <p>আমি অনুরোধের কারণেই দুটো ছবি করেছি। আশির দশকে ‘নয়নে নয়নে’ ছবিতে সংগীত পরিচালক হিসেবেই হাজির হয়েছিলাম। গত বছর সংগীত পরিচালক ইমন সাহার স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘সাইলেন্স-দ্য জার্নি অব মিউজিক’-এ অভিনয় করেছি। এটা গানের ওপর বলেই করা হয়েছে।</p> <p><strong>গত বছর জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। ৫৪ বছরের ক্যারিয়ার নিশ্চয়ই অনেক ঘটনাবহুল। আরো লিখবেন?</strong></p> <p>প্রকাশকরা তো বলেনই লিখতে। আমারও ইচ্ছা আছে। হাজারো ঘটনার স্বাক্ষী আমি। সেগুলো তুলে ধরলে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে। দেখি, সামনে লিখব।</p>