<p style="text-align:justify">পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গতকাল শুক্রবার (২ আগস্ট) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর উত্তরা। দুপুরের পর শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় বেশির ভাগ বাসা-বাড়িতে ছাত্রছাত্রীদের না পেয়ে গেট, জানালা ও দরজা ভাঙচুর করা হয়। দিনভর উত্তেজনার পর এখনো সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে।</p> <p style="text-align:justify">উত্তরার বাসা-বাড়ি ভাঙচুরের শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, এসময় সবার হাতে ধারালো অস্ত্র ও মাথায় হেলমেট ছিল। কারো কারো হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। ফলে ভয়ে তারা কেউ বাধা দেননি। কয়েক শ লোক একযোগে হামলা চালায়।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরার ১০ ও ১১ সেক্টরে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে হেলমেট বাহিনী। সাথে ছিল পুলিশের সদস্যরা। পুলিশ তাদের কোনো বাধা দেয়নি। উল্টো  হামলাকারীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। হেলমেট বাহিনী প্রতিটি বাসা বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। অনেক পরিবারে ছোট বাচ্চারা আতঙ্কে কান্নাকাটি শুরু করে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়রা আরো জানান, জুমার পর সাধারণ মুসল্লি ও ছাত্রছাত্রীরা সরকারের কাছে দেওয়া তাদের নয় দফা দাবিতে মিছিল বের করে। এসময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের সাথে যোগ দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা রামদা, হকিস্টিক ও লাঠিসোডা দিয়ে হামলা চালান আন্দোলনকারীদের ওপর। এসময় কয়েকটি বাসা-বাড়িতে ছাত্রছাত্রীরা ঢুকে পড়লে তাদের বের করে দেওয়ার জন্য সেই বাসায় গিয়ে হামলা চালান। তবে মালিকরা তাদের নিরাপদে রাখেন।</p> <p style="text-align:justify">হামলার শিকার এক ছাত্রী বলেন, আমার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমাকে ও আমার বোনদের ওপর অসহনীয়ভাবে মারধর করেছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। এসময় একটার পর একটা সাউন্ড গ্রেনেড মারছিল পুলিশ। এক ছাত্রলীগ নেতা তার রিভলভার দিয়ে আমার হাতে আঘাত করে হাত ভেঙে দিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">আরেক ছাত্রী জানান, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে হামলারীরা প্রকাশ্যে হামলার পর অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এসময় জয় বাংলা স্লোগানও দেয় তারা। তবে তাদের একজন নেতা ওই সময় বলছিলেন, এই স্লোগান দিস না। </p> <p style="text-align:justify">এলাকাবাসী জানান, হামলাকারীরা উত্তরার ১০ ও ১১ নম্বর ছাড়াও ১০ এর এ, বি, তিন, চার, ও ১৩ নম্বর সেক্টরের ইয়োলোর পাশের রোডে বাসা বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আশঙ্কা করছেন, এসব রোডের বাসা-বাড়িতে রাতে পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকেরা অভিযান চালাবে। ফলে উত্তরার ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।</p> <p style="text-align:justify">বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের এডিসি এসএম জাহাঙ্গীর হাছান দাবি করেন, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি উত্তরায়। তবে একটি বাড়ির মালিকের ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে তাদের পুলিশ সদস্যরা গিয়ে কথা বলেছেন। হামলাকারীদের ব্যাপারে তিনি তেমন কোনো কিছু জানাতে পারেননি। এছাড়া এসব নিয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। তার দাবি, সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও প্রকাশ করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এ ঘটনার পর কতজনকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ভবন ও বাসা-বাড়িতে আটকে পড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ছিলেন মাইলস্টোন কলেজের। ফলে তাদের শিক্ষকরা খবর পেয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালান।</p>