<p>শিল্পরাজধানীখ্যাত টঙ্গী ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ ও দুর্বৃত্তদের কারণে চলমান অরাজকতা প্রতিরোধে গাজীপুর মহানগর বিএনপিতে রাজনৈতিক সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের গাজীপুর জেলার সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের সারমর্ম অনুধাবন করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।</p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে তিনি এ আহ্বান জানান। টঙ্গীসহ গাজীপুরে  বিএনপির কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে ঝুট ব্যবসাসহ দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগসংক্রান্ত একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও অভিযুক্তদের প্রতিবাদ এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করে একাধিক সংবাদ সম্মেলনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।</p> <p>বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাক্তার মাজারুল আলম বলেন, ‘বিএনপি কোনো দখলবাজ ও চাঁদাবাজদের সমর্থন করে না। ইতিমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেকোনো অন্যায় কাজ না করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরেও যদি কেউ কোনো অন্যায় কাজে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’</p> <p>তিনি গাজীপুরের সব ইউনিটে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। সৎ ও যোগ্য নেতাদের হাতে নেতৃত্ব থাকলে আসন্ন রাজনৈতিক সংস্কারকে ধারণ করে বিএনপি তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে মতামত দেন তিনি। গাজীপুর মহানগরে ত্যাগী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের দিয়ে কমিটি দিলে গাজীপুরে বিএনপি সব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে বলে দাবি তার।</p> <p>জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর ও জেলায় তিন হাজার ২০০ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা দুই হাজার ২০০টি। ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করে আসছেন। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন সময় শ্রমিকরা আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন। এসব শ্রমিক আন্দোলনে একাধিক শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় নেতাদের দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ করতে সক্ষম হয়। আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ঝুট ব্যবসাসহ লাভজনক বিভিন্ন ব্যবসায় বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির লোকজনও জড়িত হয়। গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করার জন্য বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিএনপির উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও দখল বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের আটজন  নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবুও থামছে না দখল বাণিজ্য।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক বিএনপি নেতা ও ঝুট ব্যবসায়ী ফ্যাক্টরিতে দখল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করার কথা অস্বীকার করছেন। অনেক বিএনপি নেতা দখল বাণিজ্যের জন্য আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা হাইব্রিড বিএনপিকে অভিযুক্ত করছেন। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে বিএনপির অনেক নেতার নাম এসেছে। অভিযুক্ত নেতারাও আবার প্রতিবাদ দিয়ে ও সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করছেন।</p> <p>দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনায় ঢাল হিসেবে একাধিক সাংবাদিক ব্যবহৃত হচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। সূত্র বলছে, গাজীপুরে গার্মেন্টস সেক্টরের শ্রমিক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ছয়জন সাংবাদিক এক আওয়ামী লীগ নেতার ইশারায় প্রায়ই পক্ষপাতমূলক সংবাদ দিচ্ছেন। একই চক্র গাজীপুরের পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় হারুন অর রশিদের কথায় বিএনপি-জামায়াতসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি একাধিক সাংবাদিকও। সাবেক এসপি হারুন ও পালিয়ে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতার মিডিয়া সিন্ডিকেট তাদের সংবাদমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে উসকানি দিচ্ছেন বলে অনেকের অভিযোগ।</p> <p>সরেজমিন অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্র জানায়, ১৮ বছর আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কতিপয় নেতা ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা পালিয়ে গেলে পূর্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকা বিএনপির লোকজন ব্যবসা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিএনপির নতুন পদ-পদবিধারী লোকজন পুরনো নেতাদের সরিয়ে নিজেরা ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে কথিত শ্রমিক আন্দোলনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিও রয়েছে। কিন্তু অধিক শ্রমিকরা লোভনীয় দাবি আদায়ে  সহজেই আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য রাজি হয়ে যায়। ফলে শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিনই শ্রমিক আন্দোলন লেগেই থাকে। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চল, বিসিক, কোনাবাড়ী বিসিক, কাশিমপুর, সদর, সালনা বাসনসহ ৫৭টি ওয়ার্ডে গড়ে ওঠা এক হাজার ৮০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে শ্রমিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।</p> <p>অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর মহানগরের ৫৭টি ওয়ার্ডে চার শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী দখলে এক হাজার ৮০০ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। গাজীপুর মহানগরসহ গাজীপুর মহানগর, জেলা ও সব উপজেলায় অবস্থিত তিন সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে আছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপির সঙ্গে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ইন্ধন রয়েছে। বর্তমানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা সাধারণ মানুষকে বিষিয়ে তুলেছে। প্রতিদিনই শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এতে গণপরিবহন যাতায়াত বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।</p>