<p>এস আলমের বিলাসবহুল গাড়ি সরানোর দায়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সদস্যসহ তিন শীর্ষ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চাওয়া হয়। পরে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য এস এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। </p> <p>গতকাল রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক পৃথক দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। </p> <p>পৃথক দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না। </p> <p>অপরদিকে আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। </p> <p>এদিকে রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) এস আলমের বিলাসবহুল গাড়ি সরানোর দায়ে কেন্দ্র থেকে দেওয়া কারণ দর্শানোর অভিযোগের জবাব দিতে কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য এস এম মামুন মিয়া ঢাকায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে যান। এ সময় তাদের জবাবে অসন্তুষ্ট হয়ে কেন্দ্র থেকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ এ আহ্বায়ক কমিটি।</p> <p>জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকার পটিয়ার মালিকানাধীন মীর গ্রুপের ওয়্যারহাউস থেকে এস আলম গ্রুপের বিলাসবহুল ১৪টি গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। এ ঘটনায় সমালোচনা শুরু হলে অভিযুক্ত তিন নেতা গত শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অভিযোগের ব্যাখ্যা দেন। সংবাদ সম্মেলনে এ তিন নেতা ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন গণমাধ্যমের কাছে। </p> <p>এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশের পর কেন্দ্র থেকে শনিবার রাতে তিন নেতাকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ওই শোকজে তাদের নামে দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে প্রকাশিত ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা দলের প্রতি আদর্শিক অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল। এ কৃত অপকর্মে দলের নেতাকর্মীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সুতরাং কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ উল্লেখপূর্বক লিখিত জবাব কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। </p> <p>এদিকে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কমিটির অনুমোদন দেন। একই সঙ্গে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে জেলার আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির কমিটি গঠন করবেন। পরে উপজেলা ও পৌর নেতাদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে। আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব সম্মেলনে নতুন কমিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বলেও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটির কেটে যায় পাঁচ বছর। </p> <p>২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি ও অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে এ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সভাপতি ঠিক রেখে পটিয়ার সাবেক এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মহিউদ্দিনকে সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়। পরে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।</p>