<p>ফরিদপুরের সদরপুরে কোরবানির পশুর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন- কোরবানির পশু হিসেবে গরু কেনার বিষয়টি মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাই ছোট ছোট পশু কিনছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার একাধিক অংশীদার মিলে (ভাগে) একটি গরু কিনছেন। চাহিদার বিপরীতে পশুর সংখ্যা বেশি হলেও দাম এবার সহনীয় পর্যায়ে নেই। খামারি ও গরুর মালিকদের দাবি, পশুর লালন-পালন ও খাদ্যের খরচ বাড়ার কারণে পশুর দাম এবার অনেক বেশি।</p> <p>ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট সদরপুর উপজেলার শতবর্ষী সাড়ে সাতরশি পশুর হাট ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল শনিবার ছিল হাটের দিন। সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে হাট গবাদিপশুতে ভরে উঠেছে। নিজেদের পছন্দের পশুটি খুঁজে নিচ্ছেন ক্রেতারা।</p> <p>অন্যদিকে, বিক্রেতারা অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। সপ্তাহে দুদিন পশুর হাট বসে। সাধারণ সময়ে দিনে অন্তত ১০-১২ হাজার গরু কেনাবেচা হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয় হাটটি। আর পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এবার প্রতি হাটে ২০ হাজারের বেশি পশুর উপস্থিতির তথ্য জানানো হয়েছে।</p> <p>উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় পঞ্চাশ হাজার গরু বিক্রি হতে চলেছে। উপজেলায় ৯০৭টি খামার রয়েছে। তাছাড়া কৃষকেরা গরু পালনে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতিটি বাড়িতে একটি-দুটি করে গরু পালন করেন। তাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল গরু, পাকিস্তানি, রেড ইন্ডিয়ান জাতের গরু পালন করা হয়।</p> <p>হাটে ১৪টি গরু এনেছেন ব্রা‏হ্মন্দী গ্রামের গরু খামারি ফারুক হাওলাদার। এগুলোর বেশির ভাগ ফ্রিজিয়ান জাতের। তিনি বলেন, প্রতিবছর গো-খাদ্যের দাম বাড়ে। এসব গরুকে প্রতিদিন দুবার করে গোসল করাতে হয়। গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক পাখা সার্বক্ষণিক চলে। সব মিলিয়ে বর্তমানে গরুর খামারিরা খুব ভালো অবস্থায় নেই। তার ওপর গ্রামের কৃষকরাও বাড়িতে গরু পালন করেন।</p> <p>উপজেলার পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা আইয়ব বেপারী বছরে দুটি গরু পালন করেন বাড়িতে। এক বছর লালন-পালন করে কোরবানির ঈদে তা বিক্রি করে দেন। শনিবার হাটে তিনিও গরু নিয়ে আসেন। দুটি গরুর ওজন আট মণের কাছাকাছি হবে বলে ধারণা করছেন ক্রেতারা। গরু দুটিকে প্রতিদিনই বিচালি, ভুট্টা, নেপিয়ার ঘাস, খৈল খেতে দিতে হয়। প্রতিদিন ৫০০ টাকার মতো খরচ আছে এসব গরুর পেছনে। এরপর গরুকে গোসল দেওয়া, মাঠে চরাতে নিতে হয়। তাই পশু বিক্রি করে এসব খরচ ওঠাতে চান বিক্রেতারা।</p> <p>পশু বিক্রেতাদের এমন মনোভাবের বিপরীতে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, হাটটিতে পশুর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।</p> <p>গরু কিনতে আসা গিয়াস উদ্দিন জানান, হাটে গরুর সরবরাহ ভালো। তিনি কোরবানির জন্য একটি গরু কিনতে এসেছেন এ হাটে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি।</p> <p>সদরপুর উপজেলা শহরের একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হাটে পশুর আমদানি পর্যাপ্ত হলেও খামারি ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে গরুর দাম বেশি হাঁকছেন। যা আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি। পাঁচ মণের একটি গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য লাগামছাড়া। এ কারণে কোরবানির জন্য তিনি ছাগল কিনবেন।</p> <p>সদরপুর সতের রশি এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী রাজিব হোসেন বলেন, একটি গরু একজনের পক্ষে কিনে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আশপাশের কয়েকটি পরিবার মিলে একটি চার মণ ওজনের গরু কিনেছেন। এমন ওজনের গরুর দাম নিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গত বছর দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।</p> <p>সার্বিক বিষয়ে সাড়ে সাতরশি পশুর হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। তবে সিন্ডিকেট রয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা বেশি দেখা যাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি এখানে ভলান্টিয়ার টিম রয়েছে। হাটে পশুর আমদানি খুব ভালো। জাল টাকা পরীক্ষা করার জন্য এখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। </p> <p>এখনই গরুর দাম নিয়ন্ত্রণের সময় এসেছে বলে মনে করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আসজাদ। তিনি বলেন, সদরপুর মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। এলাকার মানুষ কৃষিকাজের পাশাপাশি বাড়িতে গরু-ছাগল পালন করে থাকেন।</p>