<p>চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের ব্যাংকগুলোর করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) সংক্রান্ত ব্যয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ৬১টি ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫৭১ কোটি টাকা।</p> <p>ব্যাংকাররা বলছেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে মুনাফার ধীর প্রবৃদ্ধিই সিএসআর ব্যয় কমার প্রধান কারণ। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের ৩৫টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৪১.২৬ শতাংশ কমে তিন কোটি ৪৯ লাখ টাকায় নেমেছে।</p> <p>ব্যাংকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে আছে উচ্চ খেলাপি ঋণ, তারল্য ঘাটতি ও সুশাসনের অভাব। এসব কারণে সিএসআর কমেছে। আবার গত কয়েক বছর ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তহবিলে যেত। তাই ঠিকভাবে ব্যাংকগুলো সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার ১২.৫৬ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ অনুপাত এটি।</p> <p>বেসরকারি দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক চলতি বছরের প্রথমার্ধে সর্বোচ্চ সিএসআর ব্যয় করেছে ৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটি সিএসআর খাতে ব্যয় করেছিল মাত্র ১৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক্সিম ব্যাংক ২৮ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ সিএসআর সংক্রান্ত ব্যয় করেছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে ব্যয় করেছিল ৪৭ কোটি টাকা। </p> <p>এ ছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ২১ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৯ কোটি টাকা, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১৮ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক ১৭ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১০ কোটি টাকা এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।</p> <p>তবে আর্থিক সংকটের কারণে ছয়টি ব্যাংক এখনো এ ধরনের উদ্যোগের জন্য কোনো ব্যয় করতে পারেনি।</p> <p>ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় করেছে।</p> <p>নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর তহবিলের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় এবং ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন খাতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং অন্যান্য খাতে বাকি ২০ শতাংশ খরচ করতে হবে।</p> <p>চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৭২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ২৩.২৮ শতাংশ। শিক্ষা খাতে ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২০.৫৮ শতাংশ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন খাতে সাত কোটি টাকা ব্যয় করেছে, যা মোট ব্যয়ের ২.৩৯ শতাংশ। বাকি ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে অন্যান্য খাতে। </p> <p>এসব খাতের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপখাতে ১৩৮ কোটি টাকা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে ৯ কোটি ছয় লাখ টাকা।</p>