<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল, যা এশিয়া ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর অবস্থানগত গুরুত্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ভৌগোলিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য ভূমধ্যসাগর, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত। এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে ইসলামের, খ্রিস্ট ধর্মের এবং ইহুদি ধর্মের উত্থান ও বিস্তারের সঙ্গে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে, যা বিশ্বরাজনীতির গতিপথকে বহুবার প্রভাবিত করেছে। কিন্তু সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য আবারও একটি সম্ভাব্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলা গাজায় এবং এর বিস্তৃত সামরিক অভিযানের কারণে পুরো অঞ্চলটিতে উত্তেজনার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য এই আক্রমণ চলমান থাকলেও এই সংঘাত কেবল একটি আঞ্চলিক বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত কয়েক দিনে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল লেবাননে স্থল আক্রমণ চালিয়েছে। এর জবাবে ইরান প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে নিক্ষেপ করেছে। ইরাকের কুদস বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি, যিনি নাসরাল্লাহ হত্যার পরে লেবাননে গিয়েছিলেন, এখন নিখোঁজ রয়েছেন। এসব ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ও সামরিক উত্তেজনাকে আরো তীব্র করে তুলেছে। এই সংঘাতের পটভূমিতে পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলো, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে উত্তেজনা কমানোর জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ জি-৭ দেশগুলোও সংযমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় মনে করা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt=" মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য সর্বাত্মক যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা" height="333" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/11-10-2024/4.jpg" style="float:left" width="500" />রাশিয়া ও চীন শুরু থেকেই সংঘাত এড়াতে এবং সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে জোর দিয়েছে। চীনের অবস্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীন কৌশলগত কারণে হামাসকে প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করে, যদিও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফলে এই দুটি দেশ ইসরায়েলকে সংকটের সমাধান করতে কূটনৈতিক পথে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে। চীন কৌশলগতভাবে ইরানের সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সার্বভৌমত্বের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পক্ষে নিজের অবস্থান জোরালোভাবে তুলে ধরবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে বলেছেন যে ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আক্রমণ করা উচিত। তাঁর এই উসকানিমূলক মন্তব্য শুধু ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে না, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। ইরান দীর্ঘদিন ধরেই তার পারমাণবিক কর্মসূচির মাধ্যমে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করছে, যা ইসরায়েল এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে। ট্রাম্পের মতো প্রভাবশালী নেতার এমন বক্তব্য যুদ্ধের আশঙ্কা ত্বরান্বিত করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের পরিণতি হবে মানবিক বিপর্যয়। এই অঞ্চলে যুদ্ধ চলমান থাকলে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে বাড়বে। খাদ্যসংকট, পানির অভাব এবং চিকিৎসা সহায়তার ঘাটতি দেখা দেবে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে এরই মধ্যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে এই সংকট আরো গভীর হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাবও ব্যাপক হবে। বিশ্ব অর্থনীতি, বিশেষ করে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এই মুহূর্তে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে এই সংঘাত বন্ধের প্রচেষ্টা করতে হবে। যুদ্ধের পরিস্থিতি আরো গুরুতর হলে তা কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা। মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ জনগণ যুদ্ধের সর্বপ্রথম শিকার হবে এবং তাদের জন্য জরুরি খাদ্য, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মানবিক সহায়তার মাধ্যমে সংঘাতের প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মধ্যপ্রাচ্য বর্তমানে সর্বাত্মক যুদ্ধের এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। ইসরায়েলের গাজা আক্রমণ, লেবাননে স্থল যুদ্ধ, ইরানের মিসাইল হামলা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব ঘটনার সমন্বয়ে অঞ্চলটি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশ্বরাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ভূমিকা এবং এর তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভের গুরুত্ব বিবেচনায় এ ধরনের সংঘাতের পরিণতি বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এবং আঞ্চলিক শান্তি স্থাপনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি অতি নাজুক। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো অঞ্চলে এর বিস্তার ঘটতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো নেতার উসকানিমূলক মন্তব্য এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে, যা একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কাকে উজ্জীবিত করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিগুলো কূটনৈতিকভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তবে এর সফলতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। যুদ্ধের আশঙ্কা যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তবে এর মানবিক প্রভাব হবে বিপর্যয়কর। শরণার্থী সংকট, অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানির চিত্র এই অঞ্চলের জনগণের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন প্রয়োজন সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়ে এই সংঘাত এড়ানোর জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। শুধু সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই এই যুদ্ধের মেঘকে সরিয়ে দিয়ে শান্তির একটি নতুন সূচনা করা সম্ভব।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>