<p>উম্মে আতিয়্যা নুসাইবা বিনতে হারিস আনসারিয়্যা (রা.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত নারী সাহাবি ও বীরাঙ্গনা। তিনি মদিনার আনসারি নারীদের ভেতর ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী ছিলেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে বাইআত গ্রহণ করেন। তাঁর মূল নাম নুসাইবা বিনতে হারিস, উম্মে আতিয়্যা তাঁর উপনাম। এই নামেই তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। উম্মে আতিয়্যা (রা.) নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের ময়দানে তিনি আহতদের চিকিৎসা দিতেন, রণাঙ্গন থেকে গুরুতর আহত ও বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার করতেন, তৃষ্ণার্তদের পানি পান করাতেন, শহীদদের লাশ মদিনায় নিয়ে যেতেন। যুদ্ধের সময় মুসলিম বাহিনীর খাদ্য ও রসদ পাহারা দিতেন।</p> <p>মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর উম্মে আতিয়্যা (রা.) বসরায় চলেন যান। বসরায় তিনি বনু খালাফের প্রাসাদে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি ইসলামী জ্ঞানের পাঠদানে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি হাদিস ও ফিকহের পাঠদান করতেন। বসরাবাসী তাঁকে একজন বিশিষ্ট ফকিহ (ইসলামী আইনজ্ঞ) হিসেবে গণ্য করত। তারা তাঁর কাছ থেকে ফিকহের পাঠ গ্রহণ করত, বিশেষত মাইয়েতের গোসল ও জানাজা বিষয়ক বিধি-বিধানের ব্যাপারে উম্মে আতিয়্যা (রা.)-কে বিশেষজ্ঞ মনে করা হতো। কেননা তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মদিনায় মুসলিম নারীদের গোসল ও কাফনের কাজ করতেন। এমনকি কন্যা জয়নব (রা.)-এর ইন্তেকাল করলে তাঁকে গোসল করান। এ ছাড়া তিনি নারীদের বিশেষ বিধি-বিধানের ব্যাপারেও পারদর্শী ছিলেন। এই বিষয়ে তিনি মুসলিম নারীদের শিক্ষা দান করতেন।</p> <p>মহানবী (সা.)-এর প্রতি উম্মে আতিয়্যা (রা.)-এর ভালোবাসা ছিল নিখাঁদ ও গভীর। নিজে অভাব-অনটনে থাকলেও নবী (সা.) ও তাঁর পরিবারকে নিজের ওপর প্রাধান্য দিতেন, তাঁদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেতেন। হাদিসে এসেছে, উম্মে আতিয়্যা (রা.)-কে সদকার একটি বকরি পাঠানো হলো। তিনি উপহার হিসেবে সেই বকরির কিছু অংশ নবী-পরিবারে পাঠিয়ে দেন। মহানবী (সা.) তাঁর এই হাদিয়া গ্রহণ করেন এবং তা থেকে আহার করেন।</p> <p>(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৭৯)</p> <p>উম্মে আতিয়্যা (রা.) ছিলেন একজন অসীম সাহসী নারী। তিনি খাইবারসহ নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে অংশ নেন। নিজের যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আমি সেনা কাফেলার শেষাংশে অবস্থান করতাম। আমি যোদ্ধাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের শুশ্রূষা করতাম।</p> <p>(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮১২)</p> <p>উম্মে আতিয়্যা (রা.) সেসব নারীর একজন, যাঁরা মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য, ধর্মীয় জ্ঞানে পাণ্ডিত্য ও যুদ্ধের ময়দানে বীরত্বের গুণ অর্জন করেছিলেন। তিনি মোট ৪০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে ছয়টি হাদিস সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে স্থান পেয়েছে। হাদিসের বিশুদ্ধতম ছয় গ্রন্থেই তাঁর বর্ণিত হাদিস স্থান পেয়েছে। আনাস বিন মালিক (রা.), মুহাম্মদ বিন সিরিন (রহ.), হাফসা বিনতে সিরিন (রহ.), ইসমাইল ইবনে আবদুর রহমান (রহ.), আবদুল মালিক বিন উমায়ের (রহ.)-সহ কোনো কোনো সাহাবি ও শীর্ষ তাবেঈদের অনেকেই তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।</p> <p>সাহাবায়ে কিরাম (রা.) উম্মে আতিয়্যা (রা.)-কে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখতেন। আলী (রা.) দুপুরে তাঁর ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতেন। মহান এই বিদুষী নারী ৭০ বছর বয়সে বসরায় ইন্তেকাল করেন।</p> <p><strong>তথ্যঋণ :</strong> আল ইসাবা : ৮/২৫৯; আল</p> <p>কামিল : ২/৭৭; উসদুল গাবাহ : ৭/২৮০</p> <p> </p>