<p>হেডিংটা সম্ভব হলে কোনো কাগজে লিখে বড়ো করে দেওয়ালের সাথে যুক্ত করে রাখবেন।</p> <p>অনেকে হয়তো ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাতে পারেন। কেউ কেউ তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলতে পারেন— ‘আমি অনেক নার্সিসিস্টকে চিনি যারা ক্লিনিক্যালি ডায়াগনজড এবং একই সাথে সফল।’ </p> <p>আমি জোর গলায় বলব, আপনি ভুল জানেন। কারণ ব্যাখ্যা করছি।</p> <p>প্রথমত: নার্সিসিজমের আটটির মাঝে চারটি পর্যন্ত ক্রাইটেরিয়া সাধারণ মানুষের মধ্যেও থাকে, তাই উক্ত ব্যক্তিকে ক্লিনিক্যাল নার্সিসিস্ট কোনোভাবেই বলা যাবে না।</p> <p>দ্বিতীয়ত: নার্সিসিজম জেনেটিক বা নিউরোবায়োলজিক্যাল—এই তত্ত্বের পেছনে খুব শক্তপোক্ত প্রমাণ নেই। ম্যালিগনেন্ট নার্সিসিজমে সাইকোপ্যাথির অবস্থান থাকায় কেবলমাত্র NPD রোগীদের মস্তিষ্কের গঠনগত অস্বাভাবিকতা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী দ্ব্যর্থবোধকতা প্রকাশ করেন।</p> <p>নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার জীবনের যেকোনো পর্যায়ে দেখা দিতে পারে। নিচের ছবিটি লক্ষ করুন।</p> <p><br /> <img alt="১১১" height="221" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/07/15/my1182/১১১১.jpg" width="693" /><br /> ছবিটিতে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের বিস্তৃতি বোঝানো হয়েছে। একে বলা হয় নার্সিসিজম স্পেকট্রাম। তির চিহ্নের বাঁ দিকে লক্ষ করুন। সেলফ লাভ বা নিজেকে ভালোবাসা বোঝানো হয়েছে যা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের বা নিউরোটিপিক্যাল মানুষের লক্ষণ। যতই বাঁ দিক থেকে ডান দিকে অগ্রসর হবেন, স্বাস্থ্যকর আত্মপ্রেম ধীরে ধীরে ভঙ্গুর অহং- এ পরিবর্তিত হতে থাকবে। মানুষ সেই ভঙ্গুর অহংয়ের কারণে নিজেকে ছোটো করে কথা বলবে।</p> <p>Increased Self-deprecation দ্বারা স্বাভাবিক সহানুভূতি সংবলিত আত্মপ্রেম থেকে ভঙ্গুর কোর পার্সোনার দিকে যাত্রা বোঝানো হয়েছে। তির বরাবর ডান দিকে আরও অগ্রসর হতে থাকুন। এবার decreased empathy দিয়ে বোঝানো হয়েছে ভঙ্গুর অহং-এর ওপর ধীরে ধীরে মিথ্যার প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। তির চিহ্নের ডান প্রান্তে এসে এই কয়েক স্তরের প্রলেপ পাকাপাকিভাবে ভঙ্গুর বিকলাঙ্গ অহং-এ পরিণত হয়েছে- এমনটা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি NPD-তে আক্রান্ত হয়েছে।</p> <p>তির চিহ্নের সম্পূর্ণ ডানে NPD রোগগ্রস্ত হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে পারে। কিন্তু ডানে পৌঁছে গেলে সেই সিঁড়ি ভেঙে পড়ে এবং ব্যক্তি উপর থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়।</p> <p>অনেক অপরাধবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডক্টর ডেথ নামে খ্যাত হ্যারল্ড শিপম্যানের প্রসঙ্গ আনতে পারেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল ডাক্তার।</p> <p>কিন্তু তিনি পরিণত হয়েছিলেন ম্যালিগনেন্ট নার্সিসিস্ট এবং সিরিয়াল কিলারে। ভালো করে ভেবে দেখুন। ডাক্তারিতে সাফল্য পাবার অনেক পরে ডা. শিপম্যান তার মৃত্যু খেলা শুরু করেন। যতদিনে তিনি পেশাগত সাফল্য অর্জন করছিলেন ততদিন তিনি উক্ত নার্সিসিজম স্পেকট্রামের ডান অংশে এসে পৌঁছাননি।</p> <p>পেশাগত জীবনের একপর্যায়ে তিনি তার ‘underdeveloped ego’-এর অস্তিত্ব প্রথম অনুভব করেন। বিকলাঙ্গ অহং-এ প্রলেপ দেওয়ার এক পর্যায়ে তার মধ্যে গড কমপ্লেক্স কাজ করে। সৃষ্টিকর্তার কাছে থাকে মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর ক্ষমতা। শিপম্যানের ধারণা হয়, নিজের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাতে পারা আর না পারা নিয়ে দ্বন্দ্ব তার মধ্যে যে ভঙ্গুর অহং সৃষ্টি করেছে, সেই অহংকে ঢাকার জন্য তাকেও মানুষের মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।</p> <p>পেশাগত সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার আগেই ম্যালিগনেন্ট নার্সিসিজম আরেকজন সিরিয়াল কিলারের মাঝে দেখা দিয়েছিল। উচ্চ IQ-এর অধিকারী সেই ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার পেশাগত জীবনে সাফল্যের দেখা পাওয়ার আগেই 'গড কমপ্লেক্স' এ আক্রান্ত হন। নাম তার টেড বান্ডি।<br /> লেখক: কথা সাহিত্যিক ও চিকিৎসক</p>