<p>কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণের তিন দিন পর অপহৃত যুবক বেলাল উদ্দিনকে (৩২) উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অপহরণে পরিকল্পনাকারী বেলালের চাচাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও গুলি।</p> <p>পুলিশ জানিয়েছে, অপহৃত বেলালের চাচা আমীর আহমদ (৫৫) এই অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী। ভাতিজার জমি স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করতেই রোহিঙ্গা ডাকাত শফিকে দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।</p> <p>বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>অপহৃত বেলাল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালি এলাকার আলী আহমদের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বেলালের চাচা দক্ষিণ শিলখালি এলাকার মৃত মকবুল আহমদের ছেলে আমীর আহমদ, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার মৃত ফকির মিস্ত্রির ছেলে আবচার উদ্দিন প্রকাশ রায়হান (৩৩), একই এলাকার মৃত আবুল হোছাইনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫)।</p> <p>তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড কার্তুজসহ দেশীয় কিরিচ ও দা উদ্ধার করা হয়েছে।</p> <p>টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, গত ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে বেলাল অপহরণের সংবাদ পাওয়ার পর থেকে পুলিশ উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অপহরণের পর মুক্তিপণবাবদ প্রথমে ৭০ লাখ, পরে ৫০ লাখ এবং ৪০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্রসহ একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড কার্তুজ। </p> <p>ওসি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহৃত বেলালের চাচা আমীর আহমদ এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছেন, জায়গা সম্পত্তির বিরোধের জের ধরেই রোহিঙ্গা শফি নামের এক ডাকাতের সাথে গত তিন সপ্তাহ আগে বেলালকে অপহরণে চুক্তি করেন তার চাচা আমীর আহমদ। </p> <p>এদিকে, মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে অপহৃত দুই কৃষক মুক্তিপণের টাকা দিয়ে বুধবার রাতে ঘরে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী।</p> <p>এই দুজন হলেন- কম্বনিয়াপাড়ার নুরু ইসলামের ছেলে মো. আবছার (২৮) ও পূর্ব মহেশখালিয়াপাড়ার ফকির মোহাম্মদের ছেলে নুরুল আলম (২৩)।</p> <p>হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কম্বনিয়াপাড়ার পাহাড় সংলগ্ন কৃষি জমিতে কৃষি কাজ করার সময় দুই কৃষককে অপহরণ করা হয়। বুধবার দিবাগত রাতে তারা ঘরে ফিরেছেন। অপহৃতদের স্বজনরা গোপনে অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা মুক্তিপণের টাকা দিয়ে দুজনকে ছাড়িয়ে আনেন বলে জানালেও বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে না। কত টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে, কাকে দিয়েছে তাও পরিষ্কার করছেন না। </p> <p>তিনি বলেন, মূলত পাহাড়ে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এবং স্থানীয় অপরাধিরা এতে জড়িত। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। </p> <p>টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, দুজন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে চলে আসার বিষয়টি এখনও জানেন না। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।</p> <p>কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভোক্তভুগীদের তথ্যমতে, এ নিয়ে গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও ৫৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৬৯ জন মুক্তিপণ আদায় করে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।</p>