<p style="text-align:justify">পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালন ভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা। এ উপজেলায় রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। এছাড়া আরো রয়েছে ঐতিহাসিক কমলা রাণীর দীঘি, বাংলার প্রথম বাইসাইকেলে বিশ্ব ভ্রমণকারী ভূ-পর্যটক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি, ৬শ’ বছরের প্রাচীন বিথঙ্গলের আখড়া। হাজার বছরের প্রাচীন মসজিদসহ অনেক পুরাকীর্তি। এসব দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে সবসময়।</p> <p style="text-align:justify">তবে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার মতো সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এখানে গড়ে উঠেনি পর্যটন কেন্দ্রের কোনো সুযোগ-সুবিধা। অথচ একটু যত্ন নিলেই বানিয়াচংয়ের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যেত। </p> <p style="text-align:justify">বানিয়াচঙ্গ উপজেলার মধ্যভাগে বানিয়াচং গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামটিকে পৃথক চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামোয় বিভক্ত করা হয়েছে। এই গ্রামের নামেই নামকরণ করা হয়েছে বানিয়াচং উপজেলা। সাধারণত কয়েকটি পাড়া বা মহল্লা নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম। কিন্তু বানিয়াচঙ্গের ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা ভিন্ন। ১২০টি পাড়া ও ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং গ্রামে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। </p> <p style="text-align:justify">তাছাড়া উপজেলার সরকারি সব অফিস-আদালতও এই গ্রামেই অবস্থিত। ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ কিলোমিটার প্রস্থের বিশাল ভূ-খণ্ডটি মানুষের কাছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। </p> <p style="text-align:justify">এক সময় এই বানিয়াচঙ্গ এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম গ্রাম ছিল। আর তখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে শিকাগো নগরে পরিণত হওয়ায় বানিয়াচঙ্গ পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সারাবিশ্বে খোঁজ-খবর নিয়ে ২০০৪ সালের ৭ জুন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী বানিয়াচং উপজেলা সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বানিয়াচঙ্গকে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এছাড়া ড. শেখ ফজলে এলাহী বাচ্চুর বানিয়াচঙ্গের ইতিবৃত্ত বইতেও উল্লেখ আছে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং।</p> <p style="text-align:justify">সিলেটের ইতিহাসে লাউর, গৌড় ও জৈন্তা নামের তিনটি পৃথক রাজ্যের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল বানিয়াচং। ওই সময় রাজা-বাদশারা বানিয়াচং গ্রামে কমলা রাণীর দীঘিসহ ৫টি দীঘি খনন করেন। যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৬৬ একর আয়তন বিশিষ্ট কমলা রাণীর দীঘি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি হিসেবে স্বীকৃত। দীঘিকে ঘিরে দু’টি লোক কাহিনী প্রচলিতসহ চালু আছে নানারকম কিংবদন্তী। দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রায় ৬শ’ বছরের প্রাচীন রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। মোগল আমলের নির্মিত বিবির দরগা মসজিদ, পুরান বাগ, ২নং হাবেলি ও কালিকাপাড়ার মসজিদ। </p> <p style="text-align:justify">জয়কালি মন্দির, শ্যামবাউলের আখড়া প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে এখনও দণ্ডায়মান। বিশাল হাওরে নৌকা ভ্রমণ ও হাওর দর্শনের কারণেও বানিয়াচংয়ে পর্যটক আসছে। দেশের বৃহত্তম জলাবন লক্ষিবাহরকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ভিড়ও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। দীনেশ চন্দ্র সেনের ময়মনসিংহ গিথিকার অনেক কাহিনি বানিয়াচং থেকে সংগৃহীত। যেমন দেওয়ানা মদীনা ও কমলাবতির পালা।</p> <p style="text-align:justify">১৯৯৭ সালের ১৯ অক্টোবর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমলা রাণী দীঘির পাড়ের এল আর স্কুল মাঠে এক জনসভায় ঐতিহাসিক ওই দীঘিকে ঘিরে বানিয়াচংকে পর্যটন কেন্দ্র করার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই ঘোষণা দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বাস্ববায়ন হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">ঐতিহাসিক সাগর দিঘী রক্ষা ও বানিয়াচঙ্গকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। তারা একাধিকবার সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। </p> <p style="text-align:justify">বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, বানিয়াচংকে পর্যটন কেন্দ্র করলে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো রক্ষার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।</p> <p style="text-align:justify">হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এডবোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল বলেন, বানিয়াচংকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক রয়েছে।<br />  </p>