<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ ভালো থাকা, শুধু রোগ বা অসুখের অনুপস্থিতি নয়। তাই সুস্থতা বলতে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাই বোঝায় না, সুস্বাস্থ্যে মানসিক ও সামাজিক দিকগুলোও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য শুধু ব্যক্তিগত বিষয়াবলি, যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তার চিন্তা-চেতনা, আবেগ-আচরণের ওপর নির্ভর করে না, এ ক্ষেত্রে পারিবারিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পারিবারিক-সামাজিক নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ, সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সার্বিক সাংস্কৃতিক আবহ, বিনোদন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সব কিছুই ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য তথা সার্বিক স্বাস্থ্যের প্রভাবক। মানুষের জীবনের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কাটে তার কর্মক্ষেত্রে। বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, কাজের চাপ, সময়ের সংকট এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে থাকে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব</span></span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতার অর্থ হলো কাজের চাপ সামলানো, সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। কর্মী যদি মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, তাহলে তাঁর কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। অন্যদিকে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা না গেলে কর্মক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও পেশাগত সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বেশি হলে ব্যক্তি কাজের প্রতি মনোযোগ হারায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়, উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অবসাদ বা অসুস্থতার ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির হার বাড়তে থাকে, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক সমস্যার কারণ যখন কর্মক্ষেত্র</span></span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক রোগের কারণ হিসেবে নির্দিষ্টভাবে কোনো বিষয়কে দায়ী করা যায় না। তবে অনেক ফ্যাক্টর বা বিষয় রয়েছে, ব্যক্তির জীবনে যেগুলোর উপস্থিতি রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কর্মক্ষেত্রের নানা বিষয়ও মানসিক সমস্যা বা রোগের জন্য দায়ী বা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে : </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কাজের চাপ : একটি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অনেক কাজ শেষ করতে গিয়ে কর্মীরা মানসিক চাপ অনুভব করেন। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যাশার অতিরিক্ত চাপ কর্মীদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। কাজের এই চাপ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্যহীনতা : বর্তমান</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> সময়ে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। অনেক কর্মীকে বাড়ি থেকেও অফিসের কাজ করতে হয়। এর ফলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা থেকে সৃষ্টি হতে পারে মানসিক সমস্যা। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ : কর্মক্ষেত্রের</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পরিবেশ কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। সহকর্মীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অন্যকে নিচু দেখানোর বা অপমান করার প্রবণতা, দলাদলি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি, শত্রুতামূলক আচরণ, অপেশাদার আচরণ, ঊর্ধ্বতনদের অন্যায্য দাবি বা অনৈতিক প্রস্তাব, কাজের যথাযথ স্বীকৃতি না পাওয়া, সব সময় চাকরি হারানোর আশঙ্কা ইত্যাদি কাজের পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি কর্মীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়</span></span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে :</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি : মানসিক</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয় না অথবা এটি নিয়ে কথা বলতে সংকোচবোধ করে। কর্মীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে। সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা যেতে পারে। আলোচনাসভা ও কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে কথা বলবেন এবং সেসবের সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষা : কর্মক্ষেত্রে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ধরাবাঁধা নির্দিষ্ট সময়নির্ভর কর্মঘণ্টার পরিবর্তে কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতানির্ভর নমনীয় কর্মঘণ্টার ধারণা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। কর্মীদের কাজের সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান। কর্মীদের এমন কাজ দিতে হবে, যা তাঁদের সক্ষমতার মধ্যে থাকে। ঊর্ধ্বতনরা নিয়মিতভাবে কর্মীদের কাজের চাপ পর্যালোচনা করবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তা সমন্বয় করবেন। সপ্তাহান্তে কর্মীদের জন্য কাজের চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কর্মীদের প্রাপ্য ছুটি উপভোগ করার এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করা যেতে পারে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি : কর্মক্ষেত্রে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হিংসাত্মক বা অবমাননাকর আচরণ দূর করতে কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করতে দলগত কাজের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। কর্মীদের সাফল্যকে উৎসাহিত করতে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত। আয়োজন করা যেতে পারে প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, যেখানে কর্মীদের অবদানকে সবার সামনে তুলে ধরা হবে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নিয়মিতভাবে কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করে তাঁদের উন্নতির জন্য দেওয়া যেতে পারে পরামর্শ। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব দিক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। উন্মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যেখানে কর্মীরা তাঁদের সমস্যাগুলো নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারবেন। যদি কোনো কর্মী তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করতে পারেন। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা : কর্মক্ষেত্রে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মানসিক চাপ মোকাবেলার পদ্ধতি শিখতে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে। কর্মীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে একজন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা নিয়োগ করা যেতে পারে, যাঁর কাছে কর্মীরা গোপনীয়তা বজায় রেখে তাঁদের সমস্যার কথা শেয়ার করতে পারবেন। কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যেতে পারে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রয়োজনে কর্মীদের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অংশ হিসেবে অনলাইন কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন করা যেতে পারে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক : সহযোগী</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> অধ্যাপক</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কমিউনিটি ও সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট</span></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>