<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সচিবসভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ২৫ দফা নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পত্র পাঠিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব। পত্রে ওই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া এবং তার অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার অনুরোধও জানানো হয়েছে। মূলত এসব নির্দেশনা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য, যারা দেশ ও জনগণকে সেবা প্রদানসহ দেশের সার্বিক ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে নিয়োজিত রয়েছেন। ২৫ দফা নির্দেশনার মধ্যে সাতটি (দফা নম্বর ৪, ৫, ৬, ১০, ১১, ১৬ ও ২৩) নিয়ে দু-একটি কথা বলার জন্যই এই লেখাটি। ১৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারকে জনবান্ধব সরকারে পরিণত করতে সমবেতভাবে কাজ করতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সরকারকে জনবান্ধব সরকারে পরিণত করার জন্য উল্লেখিত বাকি ছয়টি দফার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই সব দফার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিবেক ও ন্যায় বোধে উজ্জীবিত হয়ে সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা; গত্বাঁধা চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে চিন্তার সংস্কার করে সৃজনশীল উপায়ে জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করা; দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে সেবা সহজীকরণের মাধ্যমে জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা; সেবাপ্রার্থীদের কেউ যেন কোনোরূপ ভোগান্তি, হয়রানি কিংবা কোনো কারণে দীর্ঘসূত্রতার শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা এবং ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়মিত তদারকি করা।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/24-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="295" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/24-11-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />নিঃসন্দেহে এসব দফার কর্মপরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে জড়িত থাকতে হবে প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের। তাই তাদের সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহি, বিবেক ও ন্যায় বোধের বিষয়গুলো সংগত কারণেই এসে যায়। তাদের মধ্যে এসব গুণের অভাব থাকায়ই হয়তো এত দিন জনস্বার্থ বা জনসন্তুষ্টি গুরুত্ব পায়নি, দুর্নীতি প্রশ্রয় পেয়েছে, সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে ইত্যাদি। চরিত্র সংস্কারের মাধ্যমে এসব গুণ অর্জিত না হলে তাদের দিয়ে কি জনস্বার্থ রক্ষা বা হয়রানিমুক্ত জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে? সেটি যে কখনোই সম্ভব নয়, তা একজন বোকা মানুষও জানে। হয়তো সেই সত্যতা অনুধাবন করে অন্তর্বর্তী সরকার এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু কাগজের এই নির্দেশনা কি শুধুই কাগজের পাতায়ই লিপিবদ্ধ থাকবে, নাকি সেগুলো বাস্তবায়নের তদারকি বা মনিটর করার জন্য কোনো ব্যবস্থারও চিন্তা করা হয়েছে? একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং টিম বিভিন্ন পন্থায় ও কৌশলে প্রতিটি দফাকে কতটুকু বাস্তবায়ন করল বা কে এসব উপেক্ষা করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেমন চলছিল, তেমনই চলছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> জনভোগান্তির মধ্যে নিজের আখের গোছাচ্ছে সেসব পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করতে পারে। তবে এই টিমের সদস্যদের চারিত্রিক অখণ্ডতা (ইনটেগ্রিটি) যেন কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হয় সেদিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় তার মূলোৎপাটন ঘটানো যেমন সহজ হবে না, তেমনি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা সবাই যেমন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তথা দেশ চাই, তেমনি আমাদের মধ্যেই অনেকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। বড় ধরনের দুর্নীতিতে সাধারণত ক্ষমতাশালীরা যুক্ত থাকলেও ছোট ছোট দুর্নীতিবাজের সংখ্যাটিই হয়তো বেশি হবে। তবে সব দুর্নীতিবাজই সমান অপরাধী। দুর্নীতির ব্যাপ্তি এবং গভীরতার কথা বলতে গেলে একটি কথাই বলতে হয় যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্নীতি দেশটাকেই খেয়ে ফেলেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তাই দুর্নীতিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে, সম্পূর্ণভাবে না হলেও ন্যূনতম বা সহনশীল পর্যায়ে। সেবাপ্রত্যাশীদেরও শপথ নিতে হবে যে তারা কোনো অবস্থায়ই সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দেবে না। মনে রাখতে হবে, ঘুষ দেওয়াটাও কিন্তু অপরাধের শামিল, যদিও অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুষ দিতে হয়। প্রয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাগরিক কমিটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গঠনের বা সরকারের কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের এসব ভোগান্তির অভিযোগ শোনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে যথাযথ তদন্তের পর ঘুষ বা দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছোট-বড় কোনো শ্রেণির দুর্নীতিই যাতে না ঘটতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তাও করতে হবে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে তথাকথিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জিরো টলারেন্স</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর কথা আমরা আর শুনতে চাই না, আমরা সরকারের কাছে বাস্তবিক অর্থে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শূন্য সহনশীলতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রত্যাশা করি। প্রশাসনকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারলে অবশ্যই জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়মিত তদারকি করার বিষয়টি জনস্বার্থের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বিধায় নির্দেশনার মধ্যে এই বিষয়টিকেও অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ভোগ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে গতি, তাতে জনগণের, বিশেষ করে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যাদি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। নানা প্রকার ও আকারের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। ভোগ্য পণ্যের বাজার তদারকির মাধ্যমে জনস্বার্থ রক্ষা বা জনগণের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি অর্জন করা খুব সহজেই সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এটি সবার জন্যই একটি নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্ব। এই বিষয়টি হতে পারে জনবান্ধব সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অত্যন্ত দৃশ্যমান একটি উদাহরণ।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারকে জনবান্ধব সরকারে পরিণত করার উদ্দেশ্যটি অত্যন্ত মহৎ এবং প্রশংসনীয়, এককথায় সময়ের দাবি। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে যদি জনগণই উপেক্ষিত থাকে, সেই সরকার কখনো জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারে না। সরকারের সব কাজকর্ম জনকল্যাণে নিবেদিত হতে হবে এবং জনগণ যখন সেসব সেবা নিতে যাবে, তখন যদি কোনো ভোগান্তি বা হয়রানির শিকার না হয়ে সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করতে পারে, তখনই ওই সব সেবাদানকারী জনবান্ধব হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবতায় সেটি আমরা কদাচিৎ দেখতে পাই। সরকারের জনসেবায় নিয়োজিত খুব কম দপ্তরই পাওয়া যাবে, যেখানে কোনো সেবা নিতে গেলে জনগণকে হয়রানির বা দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়। এ দেশে সেবাদানকারী দপ্তরগুলোতে সেবাপ্রার্থী মানুষ সাধারণত ঘুষ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না। তাইতো সেবাপ্রার্থীরাও কোনো উপায়ান্তর না দেখে ঘুষ দিয়েই সেবা নেওয়ার মানসিকতা অর্জন করে ফেলেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যক্তির লোভ-লালসা এবং স্বার্থপরতা এতটাই বীভৎস রূপ ধারণ করেছে যে এ দেশে সৎ, নিষ্ঠাবান ও বিবেকসম্পন্ন মানুষের বড়ই অভাব। যে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে, তা সফল করতে হলে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রক্রিয়া চালু করা এবং উল্লেখিত দফাগুলোর নির্দেশনা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। আর সেটি করতে বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সবাইকে সততা, নিষ্ঠা এবং জনসেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মনমানসিকতা এবং চিন্তা-ভাবনায় সংস্কার ঘটাতে হবে। অন্যদিকে জনগণকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এক যৌথ প্রয়াসের মাধ্যমেই এই উদ্দেশ্যটি পরিপূর্ণ রূপ পেতে পারে। আর তা করা গেলেই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই জনবান্ধব হয়ে উঠবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারকে একটি জনবান্ধব সরকারে পরিণত করা গেলে তার সুফল ভোগ করবে এ দেশের প্রতিটি মানুষ। শুধু এ কাজের জন্যই অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব</span></span></span></span></p>