<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে প্রায় সবাই তটস্থ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপদে বসবাস করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের রয়েছে। মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, মানুষের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে। কাজেই সংকটকালীন অবস্থা থেকে উত্তরণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে মানুষের স্বার্থেই রাষ্ট্রের সব আয়োজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে। কেননা পুলিশকে দায়িত্ব পালনের বাইরে রেখে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা দুষ্কর। পুলিশ বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা এখনো পূর্ণ উদ্যমে মাঠে কাজ করছেন না। কেননা চলমান ঘটনাপ্রবাহে পুলিশের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়েছে, দেশের অনেক থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, থানায় ব্যবহৃত মালপত্র লুট হয়েছে, পুলিশের ব্যবহৃত যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অনেক পুলিশ হতাহত হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে পুলিশ বাহিনী একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে চলেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলমান পরিস্থিতিকে অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত পুলিশ বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশে পুলিশে ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে অনেকেই মতামত দিয়েছে। আবার পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবিদাওয়া উত্থাপিত হয়েছে। এখন সরকারের উচিত হবে উত্থাপিত দাবিগুলোর মধ্যে যেসব বাস্তবতার নিরিখে পূরণ করা উচিত, সেসব পূরণের লক্ষ্যে দ্রুত কাজ শুরু করে দেওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বুঝতে পারবেন, সরকার তাঁদের ন্যায্য দাবির পক্ষে সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুলিশকে ঢেলে সাজাতে সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সুপারিশমালার আলোকে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো। এ ছাড়া পুলিশের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বিশেষ সেবা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে চালু করা অত্যন্ত জরুরি। কর্মঘণ্টা, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চাপ, নেতিবাচক মূল্যায়ন, প্রমোশনের দুশ্চিন্তা, কর্মস্থলের পরিবেশ ইত্যাদি কারণে পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের লক্ষণীয় অবনতি ঘটে থাকে। এসব থেকে উত্তরণে পুলিশ সদস্যদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এসে উত্তম পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। গঠিত সংস্কার কমিশনও সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন সাপেক্ষেই সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। এর আগে পুলিশ সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে গবেষণা পরিচালিত হলেও সেসব বাস্তবায়িত হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত প্রতিহিংসাপরায়ণতা থেকে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিহিংসাপরায়ণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। পূর্ববিরোধ কিংবা শত্রুতার বশবর্তী হয়ে মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে এবং অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। অপরাধ করার আগে মানুষ অবিবেচক হয়ে ওঠে অর্থাৎ মানুষ নিয়ন্ত্রণহীন হয়েই অপরাধকর্মে জড়ায়। একই সমাজে বসবাস করে ক্রোধ কিংবা ক্ষোভের কারণে অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর আক্রমণ করার নামই প্রতিহিংসা। তা ছাড়া কোনো মানুষ যদি অপরাধ করেই থাকে, তাহলে অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। এখানে ব্যক্তিবিশেষের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই কাজটিই হয়ে যাচ্ছে এবং অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সর্বত্র। মব ভায়োলেন্সের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য হারে ঘটছে। সংগত কারণেই সমাজের মধ্যে বসবাসরত মানুষের রাজনৈতিক মতের ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক কাঠামো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে অপরাধ ও অপকর্ম প্রতিহত করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব; রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের এই বিষয়টি নিশ্চিত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কমিউনিটি পুলিশিংয়ের বাস্তবতাকে আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছি। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের দর্শনকে যথার্থভাবে ব্যবহার করে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারলে সমাজ থেকে ছোটখাটো অনিয়ম ও অন্যায় প্রতিহত করা সম্ভব হবে। এই ব্যবস্থাপনায় সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের অংশগ্রহণ থাকায় পারস্পরিক হৃদ্যতার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে এবং মানুষের জীবনে শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা, কারো প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড ঘটানো, অপহরণ করা, জিম্মি করে টাকা আদায় ইত্যাদি কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">  লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও সভাপতি ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>