<p>জন্মগতভাবে ডান চোখে একদমই দেখতে পান না সুজাতা। অন্ধত্ব তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। কিন্তু বাধা সৃষ্টি করেছে সংসারের অভাব-অনটন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুজাতা সাঁওতাল চুনারুঘাট সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সুজাতাই সবার ছোট। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা-বাগানেই তার বেড়ে ওঠা। সুজাতার বাবা বেকার। মা অলকা সাঁওতাল লালচান্দ বাগানের নিয়মিত চা শ্রমিক। তিনি যা উপার্জন করেন, তা দিয়েই চলে পুরো সংসার। এই টাকার মধ্যেই আবার সুজাতার পড়াশোনা। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে এত দিন পড়া চালিয়ে গেছেন। দিন যত যাচ্ছে, পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। সুজাতা বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই এক চোখে দেখতাম আর এক চোখে দেখতাম না। এই প্রতিকূলতা জয় করে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। ভর্তি হয়েছি চুনারুঘাট সরকারি কলেজে। পরিবারে একজন মাত্র উপার্জনকারী। বলতে গেলে পরিবারের অবস্থা খুবই করুণ। মা চা-বাগানে কাজ করে যা উপার্জন করেন, তা দিয়েই সংসার চালিয়ে আমার লেখাপড়ার খরচ দেওয়া সম্ভব হয় না।  কিভাবে পড়ার খরচ চালাব, তা নিয়ে যখন চিন্তা করছি, তখনই পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের সহযোগিতায় চার মাস সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। জামা, সালোয়ার, ব্লাউজসহ বেশ কিছু কাপড় কাটা ও সেলাই করা শিখেছি। একটা জামা সেলাই করলে কমপক্ষে ২০০ টাকা পাওয়া যাবে। প্রতিদিন একটা জামা সেলাই করলেও আমার পড়ার খরচ চালিয়ে সংসারেও কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারব। মায়ের কষ্ট কমবে। আশা করছি, বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া এই মেশিনেই আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। এখন আর আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে না। সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে আমার ভাগ্যের চাকা ঘোরাব। মায়ের পাশে দাঁড়াব। বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে, আমিও পড়াশোনা করে মানুষের কল্যাণে কাজ করব।’</p> <p>‘চা-বাগানে বাবার কোনো কাজ নেই। মা তরুলতা রায় লালচান্দ চা-বাগানের নিয়মিত শ্রমিক। সারা দিন চা-পাতা তুলতে পারলে ১৭৮ টাকা পান। এই দিয়ে কী করে চলে সংসার? মা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। মা যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট। এর মধ্যে আমাদের ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ কথাগুলো বলছিলেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা-বাগানের চা শ্রমিকের মেয়ে তৃষ্ণা রায়। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজের ইতিহাস বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। ছোট ভাই চন্দন রায় হবিগঞ্জ জে কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মায়ের কষ্ট বোঝেন তৃষ্ণা। সব সময়ই চিন্তা করেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু একটা করে নিজের খরচ চালিয়ে যেতে হবে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্তরে লালিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। সুযোগ আসে বসুন্ধরা শুভসংঘ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ নেওয়ার। ভর্তি হয়ে যান সেখানে। পড়ালেখার পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে চার মাস বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক ধরনের জামা কাটা ও সেলাইয়ের কাজ শিখে নেন। এবার প্রয়োজন ছিল একটি সেলাই মেশিনের। এটি হলেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ারটি হয়ে যাবে। তৃষ্ণার হাতে জীবন চালিয়ে নেওয়ার সেই হাতিয়ারটি তুলে দিয়েছে দেশসেরা শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপ।</p> <p> </p> <p> </p>