<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবা রে, গত দুই দিন চুলায় আগুন জ্বলে না। স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। পাঁচটি সন্তান নিয়ে মুড়ি খেয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। হাতে কোনো কাজ নেই, শরীরও খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। খাবারের জন্য স্ত্রী-সন্তানরাও কান্নাকাটি করছে। তাদের মুখে খাবার তুলে  দেব সেই উপায় নেই। আজ আপনারা চাল, ডাল নিয়ে এলেন। এগুলো দেখেই আনন্দে মনটা ভরে গেল। এখন অন্তত কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তে খাইতে পারব। যাঁরা খাবার পাঠিয়েছেন, তাঁদের জন্য অনেক দোয়া করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া খাদ্য সহায়তা হাতে পেয়ে এভাবেই আবেগ ও ভালোবাসা মাখানো কথা বলছিলেন দিনমজুর মোস্তফা কামাল (৫০)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কুতুরা গ্রামে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বন্যায় সব হারানো দুস্থ ও অসহায় পরিবারগুলো খাদ্যসামগ্রী পেয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়েছে। এবারের বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বাউলশিল্পী আব্দুল খালেক চান (৬৫)। সহায়-সম্বলহীন এই বাউলশিল্পীকে গত ছয় বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার কুতুরা গ্রামে একটি ঘর করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। বাউলগান করে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন। এবারের বন্যায় তাঁর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বুক সমান পানি ওঠে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদীর পারে হওয়ায় থাকার ঘরে দ্রুত পানি ওঠার ফলে কোনো কিছু বের করার সুযোগ পাননি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে বের হয়ে অন্যের বাড়ির বারান্দায় আশ্রয় নেন। গত পাঁচ দিন পরিবার নিয়ে চিড়া ও মুড়ি খেয়ে আছেন। আব্দুল খালেক চান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনিতেই গানের কোনো বায়না নেই। এর ওপর হঠাৎ বন্যায় আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। কিভাবে যে চলব সে কথা ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের এই এলাকায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা ত্রাণ তো দূরের কথা, দেখতেও আসেনি। আপনারা আমাকে যে খাদ্যসামগ্রী দিলেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। কয়েক দিন ধরে ভাত কী জিনিস খেয়ে দেখতে পারিনি। বসুন্ধরা শুভসংঘকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি দোয়া করি তারা যেন এভাবে মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়াতে পারে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই আশ্রয়ণকেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা দুখু বিবি (৬০)। স্বামী-সন্তানহীন এই বৃদ্ধা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। বন্যায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই খাট পর্যন্ত পানি চলে আসে। কোনো রকম ঘর থেকে বের হয়ে অন্যের সহযোগিতায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এর বাড়ি-ওর বাড়ির বারান্দায় থেকে দিন পার করছেন। কেউ খাবার দিলে খান, অনেক সময় না খেয়েই থাকতে হয়। বসুন্ধরা শুভসংঘের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আনন্দে কান্না করে দুখু বিবি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কত দিন পর যে রান্না করে খামু। আপনাদের কী বলে ধন্যবাদ দিমু। একজনে হাপকেজি মুড়ি কিনে দিছে। এইটাই দুই দিন পানিতে ভিজাইয়া খাইছি। আমি আপনাগর লাইগা দোয়া করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফজেলা বেগমের (৫৫) ঘরে প্রতিবন্ধী স্বামী। তিনিও মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় তাঁর ঘরের ভেতর পানি ওঠে। একরকম গৃহবন্দি হয়ে পড়েন তিনি। ঘরে যা খাবার ছিল, তা-ই স্বামীকে নিয়ে খেয়েছেন। ফজেলা বেগম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত রাত থেকে ঘরে কোনো খাবার নেই। আপনাদের এই খাবার প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে খাব। আপনারা যে সহযোগিতা করলেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। অন্তত কয়েক দিন খাবারের কষ্টে থাকতে হবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এমন অভাব প্রায় প্রতিটি পরিবারেই। সবাই বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া খাদ্যসামগ্রী পেয়ে অনেক খুশি হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা শুভসংঘের আহ্বায়ক প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করছি। এই এলাকার কোনো মানুষ বলতে পারবে না কখনো এত বন্যা হয়েছে। কৃষকদের ফসলি জমি শেষ, ফিশারি ও পুকুর বানের জলে ভেসে গেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে গরিব মানুষের ওপর। একদিকে ঘরে চাল-ডাল নেই, অন্যদিকে পানি ওঠায় থাকার জায়গা নেই। আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘের সহযোগিতায় এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>