<p>২০-২৫ বছর আগে স্বামী আবু কালাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর ছোট ছোট তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সুখের আশায় ঢাকায় পাড়ি জমান স্ত্রী সাহিদা বেগম। ঢাকার মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে নিজে অন্যের বাসায় কাজ শুরু করেন। এভাবে তিন ছেলে এক মেয়েকে অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন স্বামীহারা সাহিদা বেগম। এর মধ্যে একমাত্র মেয়ে রিনা বেগমকে বিয়ে দিয়েছেন। মেজো ছেলে জন্মগতভাবে মৃগীরোগে আক্রান্ত হওয়ায় কোনো কাজ করতে পারেন না। বছর ধরে বড় ছেলে জামাল উদ্দিন ও ছোট ছেলে লিটনের আয়ের টাকায় তাদের সংসার ভালোভাবেই চলে আসছে। বড় ছেলে জামালের ঘরে কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। ওই সন্তানের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করে সন্তানসহ তাঁর কাছে চলে যায়। এরপর জামাল আর বিয়ে করতে রাজি হননি। জামালের একটাই কথা ছিল, ‘যত দিন বাঁচবেন মাকে নিয়েই বাঁচবেন।’ কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। গত ১৯ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ চালাকালে পদদলিত হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। শহীদ জামাল উদ্দিন (৩৫) ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবুল কালামের বড় ছেলে। তিনি ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাবুর্চি কাজ করতেন। বাবুর্চি কাজ কম থাকায় চলতি বছরের জুন থেকে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন তিনি।</p> <p>শহীদ জামাল উদ্দিনের মা সাহিদা বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, মারা যাওয়ার আগের দিন রাতে শুয়ে শুয়ে মাকে বলেছিলেন, ‘মা, ঢাকায় বাসাভাড়াসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখানে আর থাকা যাবে না। আমরা গ্রামের চলে যাব। এনজিওর থেকে ঋণ নিয়ে দুই ভাই দুটি রিকশা কিনে চালানো শুরু করব।’ মা সাহিদা বেগমও ছেলের এ কথার সঙ্গে সায় দিয়েছেন। এরপর সকাল ১০টার দিকে নাশতা করে রিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান জামাল। দুপুর ১২টার দিকে খবর আসে জামাল মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন। তাঁকে সঙ্গের লোকজন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। এ খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে চলে যায়। কিন্তু জামালের সঙ্গে তাদের আর কথা হয়নি। বিকেলের দিকে জামালের কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় তাঁকে বাসায় নিয়ে আসার কথা বলেন মা সাহিদা বেগম। মায়ের কথামতো হাসপাতাল থেকে বের করে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠানোর সময়ই জামাল মারা যান।</p> <p> </p> <p> </p>