<p>জন্মের প্রায় তিন বছর পর হঠাৎ একদিন জ্বরে আক্রান্ত হয় শুভ চন্দ্র দাস। এই জ্বরই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে শুভর জীবনে। কয়েক দিন পর জ্বর সারলেও সে মানসিক ও বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে যায়। তার বয়স এখন প্রায় ১৮ বছর। ছোটবেলায় কয়েক বছর মায়ের কোলে-আঁচলের ছায়ায় মুক্ত জীবন পার করলেও প্রায় ১৩ বছর ধরে তার শিকলবন্দি জীবন কাটছে। শুভ চন্দ্র দাস নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের আসমা গ্রামের সুভাষ চন্দ্র দাসের ছেলে। গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) তাদের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুভর হাতে রশি বেঁধে বাড়ির আঙিনায় একটি আমগাছের গোড়ায় বেঁধে রাখা হয়েছে। হাতের রশিটি কামড়িয়ে খোলার চেষ্টা করছে। মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। কথা বলতে পারে না। হাতে বাঁধা প্রায় আট ফুট লম্বা রশির গণ্ডির মধ্যেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তার চলাফেরা। বাড়ির লোকজন দেখলেই হাত উঁচিয়ে রশি খুলে দেওয়ার জন্য ইশারা করে।</p> <p>শুভর মা কল্পনা রানী দাস জানান, শুভর বয়স যখন প্রায় তিন বছর, তখন হঠাৎ একদিন তার শরীরে জ্বর আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে টাইফয়েডের ওষুধ খাওয়ালে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। এ অবস্থায় তাকে বেঁধে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। এভাবেই প্রায় ১৩ বছর ধরে তাকে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। খাওয়া, গোসল কোনো কিছুই নিজের হাতে করতে পারে না।</p> <p>শুভর বাবা প্রায় ৯ বছর আগে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। অর্থাভাবে অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা, বাকি তিন সন্তানের লেখাপড়া—কোনোটাই ভালোভাবে হচ্ছে না।</p> <p>শুভর ভাই সোহাগ চন্দ্র দাস বলেন, ‘শুভর চিকিৎসার জন্য ভিটেটুকুও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন টিউশনি করে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে মা, ভাই-বোনদের নিয়ে দিন পার করছি।’</p> <p>বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘শুভ নামের ছেলেটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে বেঁধে রাখে বলে আমরা খবর পেয়েছি।’</p> <p> </p> <p> </p>