<p>কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিস ঘিরে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরির একাধিক চক্র এখনো সক্রিয় রয়েছে। এরই মধ্যে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইয়াছির নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের ভুয়া জন্ম নিবন্ধনে পাসপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে চক্রের কিছু সদস্যের নাম আলোচনায় আসে। ইয়াছির আটকের পর থানায় মামলাও হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার হন চক্রের আরো পাঁচ সদস্য। কিন্তু সাত মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ ওই চক্রের মূল হোতাদের এখনো সামনে আনতে পারেনি বলে জানা গেছে।</p> <p>ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি চক্রের একজন হলেন জেলার মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের নিবন্ধন সহকারী (সচিব) ইসমাইল হোসেন। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের গত ২০ জুন রাতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন তিনি। ইসমাইল কুমিল্লা আদর্শ উপজেলার উত্তর দুর্গাপুর ইউনিয়নের গুনানন্দি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে।</p> <p>জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঘিরে বেশ কয়েকটি দালালচক্র রয়েছে। এ চক্র এর আগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির মাধ্যমে পাসপোর্ট করে দিত। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া পরিচয়ে জন্ম নিবন্ধন বানিয়ে পাসপোর্ট করতে এসে ইয়াছির (১৯) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক গ্রেপ্তার হন। তিনি পাসপোর্ট অফিসসংলগ্ন মদিনা ট্রাভেলসের হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ নামে দুই দালালের সঙ্গে পাসপোর্ট করার জন্য চুক্তি করেন। পরে ওই চক্র কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম ঘোড়াশাল গ্রামের ভুয়া ঠিকানায় রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরের সব কাগজপত্র তৈরি করে দেয়। ওই ঘটনায় ১৬ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন পাসপোর্ট অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। পরে পাসপোর্ট অফিস এলাকা এবং মুরাদনগর থেকে জ্বালিয়াতিতে জড়িত ফয়সাল, মোশারফ, নাসির উল্লাহ ও শরীফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। আসামিদের স্বীকারোক্তির পর গত ২০ জুন রাতে গ্রেপ্তার হন মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের সচিব ইসমাইল হোসেন। তবে এই চক্রে কারাবন্দি ইসমাইল হোসেন একা নন, আরো কয়েকজন জড়িত থাকতে পারেন। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা চক্রটি কারাবন্দি ইসমাইলকে বের করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।</p> <p>এদিকে রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন নিয়ে মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন ও পাশের পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>পাহাড়পুর ইউনিয়নের নিবন্ধন সহকারী আনিছুর রহমান বলেন, ‘আদালতে জবানবন্দিতে আসামিরা সদর ইউনিয়ন থেকে জালিয়াতি করে জন্ম সনদের কথা বললেও এখন দায় চাপানো হচ্ছে আমাদের পরিষদের ওপর। কারণ আসল জন্ম নিবন্ধনটি ছিল পাহাড়পুর ইউনিয়নের। এটা নিয়ে জালিয়াতি করেছে মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ। এর আগে গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনটি সদর ইউনিয়নের ইসমাইলের কাছ থেকে নিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।’</p> <p>মুরাদনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী তুফরিজ এটন বলেন, ‘পুরো বিষয়টি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। জালিয়াতি কোথা থেকে হয়েছে, তা লুকানোর সুযোগ নেই। জন্ম নিবন্ধনের প্রিন্ট কপিতে আমার স্বাক্ষরটি স্ক্যান করা বসানো হয়েছিল।’</p> <p>গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলা ডিবি পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিপন দাস বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দির পর রোহিঙ্গা যুবককে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগে মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের সচিব ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।’</p> <p> </p>