<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগে কখনো এত সামনে থেকে বন্যা দেখিনি, প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না কি করা উচিত। উদ্ধারের আকুতি নিয়ে কন্ট্রোলরুমে হাজার হাজার ফোন। প্রথম যখন আমরা নৌকা নিয়ে উদ্ধারে গেলাম, মনে হচ্ছিল যেন হাওরের মাঝে আছি। যত দূর চোখ যায় শুধু পানি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অঞ্চলভিত্তিক শাখা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর স্বেচ্ছাসেবক ও উপ-যুব প্রধান নুসরাত জাহান নিশি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ২০ আগস্ট অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ অন্তত ১১ জেলায় ছড়িয়ে পড়ে বন্যা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখ লাখ মানুষ। অলাভজনক সংস্থা অক্সফাম বাংলাদেশ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেনী ও নোয়াখালী জেলা। এই দুই জেলার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বন্যায় নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্ট শুরু থেকেই কন্ট্রোলরুম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলাতেই নিরবচ্ছিন্ন কাজ করছেন জেলা রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নোয়াখালীর বন্যায় মাঠ পর্যায়ে শুরু থেকেই ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক মেজবাহ উদ্দিন আকবর, নুসরাত জাহান নিশি ও ফারহানা হায়দার মিম। পরে ঢাকা থেকে যুক্ত হন সংগঠনটির সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক আরাফাত রহমান তামিম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০ আগস্ট রাতেই নোয়াখালীতে যুব রেড ক্রিসেন্টের উদ্যোগে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়। ২১ আগস্ট সকাল থেকেই সাহায্যের আকুতি জানিয়ে একের পর এক ফোন আসতে থাকে কন্ট্রোলরুমে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক মারুফা জাহান মেঘলা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চোখের সামনে নিজের ঘরে পানি বাড়তে দেখছি। এরই মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট থেকে কন্ট্রোলরুম চালু করে পরিবারকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে চলে যাই ইউনিটে। এরপর অনবরত ফোন আসতে থাকে কন্ট্রোলরুমে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্যার প্রথম দিকে নোয়াখালীতে চরম নৌকাসংকট ছিল।  আরাফাত রহমান তামিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও বন্ধুদের সহযোগিতায় ইনফ্ল্যাটেবল বোট (রাবারের তৈরি হালকা নৌকা), স্ট্রেচার, জরুরি ওষুধ, টর্চলাইটসহ বিভিন্ন উদ্ধার উপকরণ নিয়ে নোয়াখালী যান ২২ আগস্ট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠকে তামিম বলেন, প্রবল স্রোত, তীব্র বৃষ্টি, আলোকস্বল্পতা, সাপের উপদ্রবসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে নোয়াখালীর এক হাজার ৩০০ আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতিই বলে দেয় দ্রুত এই মানুষগুলোকে উদ্ধার না করা গেলে কী ভয়াবহ অবস্থা হতো। সেনবাগ উপজেলার একটি গ্রামে পানিবন্দি এক বৃদ্ধ নারীকে (৮০) তালাবদ্ধ করে পরিবারের লোকজন কোথাও চলে যায়। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে তালা ভেঙে সেই ভদ্রমহিলাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসেন রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরেক স্বেচ্ছাসেবক শাহিনুর আক্তার মিম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি গ্রামে আমি একা তিনটি কুকুর উদ্ধারে যাই। পানি যে কোথাও কোথাও বুকসমান আন্দাজ করতে পারিনি। সঙ্গে থাকা লাইফ জ্যাকেট ও সুইমিং রিং দিয়ে দুটো কুকুরের বেশি ভার নেওয়া যায়নি। ওই মুহূর্তে আরেকটি কুকুরকে রেখে আসা জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের একটি ছিল। সেই কুকুরটার অসহায় চাহনি এখনো চোখে ভাসে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span>  </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় ২১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট রেসকিউ টিম শতাধিক গর্ভবতী নারী, বৃদ্ধ, সাধারণ জনগণ ও শিশুদের উদ্ধারের পাশাপাশি গবাদি পশু ও পোষা প্রাণীও উদ্ধার করেছে। বন্যার প্রথম দিন থেকেই রান্না করা খাবার, শুকনা খাবার, স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও কিট সরবরাহ চলছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রশিক্ষিত প্রায় ২৫০ জনসহ ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে বলে জানান স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে পানি নামলেও এখনো নোয়াখালীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। ভাঙা রাস্তায় সমস্যা হচ্ছে যানবাহন চলাচলে। সেই সঙ্গে রয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। রয়েছে খাদ্যসংকট। এখন ত্রাণকাজে সমন্বয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন জরুরি।</span></span></span></span></p>