<p>ডায়াবেটিক রোগীদের নানা জটিলতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রেটিনায় সমস্যা, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।</p> <p>একবার রেটিনোপ্যাথি দেখা দিলে আর আগের অবস্থায় ফেরে না। এই রোগে চিকিত্সা অনেক ব্যয়বহুল এবং এর শেষ পরিণতি অন্ধত্ব।</p> <p>দেশের আট বিভাগের কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিয়ে আসা ১০ হাজার রোগীর ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে এই গবেষণাকাজ শেষ করে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেটিনা হলো চোখের পেছনে অবস্থিত আলোক সংবেদনশীল টিস্যু, যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগে সাধারণত দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিক চিকিত্সা করা না হলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ৩০ বছরের কম বয়সী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ১০ বছর পর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা শতকরা ৫০ ভাগ। কিন্তু ৩০ বছরের অধিক বয়সী ডায়াবেটিক রোগীদের রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি, শতকরা ৯০ ভাগ।</p> <p>বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীদের ওপর রেটিনোপ্যাথি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এটিই প্রথম গবেষণা।</p> <p>ডা. সেলিম জানান, প্রতি ১০ জনে ৮ জন ডায়াবেটিক রোগীর মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। কিডনির সমস্যা, ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন এমন রোগীদের বেশির ভাগই ডায়াবেটিসজনিত। চোখে ছানি পড়ার অর্ধেকেরই কারণ ডায়াবেটিস। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি একটা বড় জনগোষ্ঠীর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস হলো অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ।</p> <p>এ ছাড়া নিঃসন্তান নারীদের প্রতি দুইজনে একজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, মানসিক অবসাদ থেকে শুরু করে মানসিক চাপ এদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই বছরের বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৬২.৪ শতাংশ যৌন অক্ষমতায় ভুগছে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে রেটিনোপ্যাথি স্কিনিং ব্যবস্থা নেই। একজন রোগীকে বেশ কয়েকটি রেটিনোপ্যাথি ইনজেকশন দিতে হয়, অথবা লেজার করাতে হয়। এসব ব্যবস্থা নিলে অন্ধত্বের সময় পিছিয়ে যায়। অর্থাত্ আগে পাঁচ বছরে অন্ধ হতো, এখন চিকিত্সা নিলে হয়তো ১০ বছর পরে হবে।</p> <p>বাংলাদেশে ডায়াবেটিস পরিস্থিতি : আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে সারা পৃথিবীতে মোট ডায়াবেটিক রোগী ছিল ৫৪ কোটি। এর মধ্যে ২৭ কোটি মানুষ জানেই না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আক্রান্তদের চারজনের মধ্যে তিনজনের বেশি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে বাস করে।</p> <p>তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিক রোগী এক কোটি ৩১ লাখ, যা বিশ্বে অষ্টম। ২০৪৫ সালে এই সংখ্যা দুই কোটি ছাড়াবে, তখন আক্রান্তের দিক থেকে সপ্তম স্থানে নিয়ে যাবে। আশঙ্কার কথা হলো, শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, শিশুদের মধ্যেও বাড়ছে ডায়াবেটিস। ১৫ থেকে ২০ বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৪.৪ শতাংশ। ২৬ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাদের ৬৫ শতাংশ পরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। দেশের আট মেডিক্যাল কলেজে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বিভাগ থাকলেও বাকিগুলোতে নেই। সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য ৮০ হাজার শয্যা থাকলেও হরমোনজনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য রয়েছে ১২২ শয্যা।</p> <p> </p>