<p>কোমড়ে লাগা বুলেটের ক্ষত এখনো শুকায়নি, শরীরে প্রায়ই জ্বর থাকে, সামান্য ঝাঁকুনিতে তীব্র ব্যথা, হাঁটার যেন শক্তি নেই। এমন অবস্থায়ই হাসপাতাল ছাড়তে হলো কিশোর রিফাত তরফদারকে। তার স্বজনদের কাছে যাতায়াত ও পথ্য কেনার খরচটুকুও নেই।</p> <p>রিফাতের বাবা মাহমুদ তরফদার বলেন, ‘বেতন যা পাই থাকা-খাওয়াতেই শেষ। ছেলের চিকিৎসা খরচ মিলাতে গিয়ে এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে আমার।’</p> <p>গত ৪ আগস্ট বিকেলে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় সংঘাত সহিংসতার মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয় রিফাত। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র নিয়ে এখন বাসায় নিদারুণ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে সে। কারণ এখন তার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা অর্থসংকট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার বাবার সামান্য আয়ে হাসপাতালের ন্যূনতম খরচ চালানোও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।</p> <p>সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে রিফাত এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। বাবার সঙ্গে থাকত মিরপুর-১২ নম্বর পানির ট্যাংকি মসজিদের কাছে। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানায়।</p> <p>রিফাতের বাবা মাহমুদ তরফদার মিরপুরে একটি হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন যাওয়া-আসা, রোগীর সঙ্গে একজনকে রাখতে গিয়ে প্রতিদিন আট শ টাকা চলে যায়। এ টাকা কোথায় পাব? কে দেবে বলতে পারেন? ওষুধের কথা আর নাই বা বললাম।’</p> <p>ছেলের চিকিৎসা খরচ নিয়ে চিন্তিত মাহমুদ বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। চিকিৎসা চালিয়ে যাব কিভাবে? বেশি টাকা খরচ করতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে এসেছি। তবে ডাক্তার বলেছেন ওর সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। যখন বেশি খারাপ অবস্থা হয় তখন ধারদেনা করে কিছু টাকা জোগাড় করে হাসপাতালে যাই।’</p> <p>আহত রিফাত বলে, ‘মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। মানুষ এলোমেলো ছুটতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার কোমড়ে গুলি লাগে। এর পর আর কিছু বলতে পারব না।’</p> <p>জ্ঞান ফেরার পর রিফাত দেখে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শুয়ে আছে সে। জানতে পারে কয়েকজন বন্ধু আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, পরে ডেলটা হাসপাতালে নেয়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।</p> <p>অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হলেও ডাক্তাররা তাকে জানিয়েছেন সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।</p> <p> </p>