<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯ জুলাই, দুপুর ২টা। রাজধানীর মিরপুরের ১৩ নম্বর রোড এলাকার এক মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিল কিশোর আবু হুরায়রা তিমাম। পথে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সামনে মানুষের ভিড় দেখে এগিয়ে যায় সে। সেখানে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গুলিবিদ্ধ হয় আবু হুরায়রা। পেট ফুটো হয়ে মূত্রথলিতে আটকে যায় গুলি। এরপর প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও গুলিটি বের করা সম্ভব হয়নি। কারণ এতে তার মৃত্যুঝুঁকি বেশি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কথা হয় আবু হুরায়রা এবং তাঁর মা জিনাত চৌধুরীর সঙ্গে। মিরপুরের গ্লোরী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হুরায়রা। মিরপুর ১৩ নম্বরেই তাদের বাসা।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জিনাত চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গুলি পাকস্থলী ভেদ করে মূত্রথলিতে গিয়ে আটকে আছে। ছেলে আমার প্রস্রাব-পায়খানা করতে পারে না। এ পর্যন্ত পাঁচটি হাসপাতালে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছি গুলি বের করার জন্য। কিন্তু কেউ বলছেন, গুলি বের করলে মৃত্যুঝুঁকি আছে; কেউ বলছেন, পেটে রাখাও নিরাপদ নয়। এখন আমি কী করব?</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জিনাত চৌধুরী বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শুনেছি, আন্দোলনে আহতদের বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে। আমার ছেলেটাকে কেউ তো নিয়ে যাচ্ছে না। গায়ে জ্বর, ঘুমায় না। ইদানীং শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। গুলির ব্যথায় কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে। আমার একটাই ছেলে। কেউ কি এগিয়ে আসবে না ওকে বাঁচাতে? </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিএসএমএমইউয়ে ভর্তি আরেক শিক্ষার্থী আল মায়েজ হোসেন রিয়েল। তারও গুলি লেগেছে। একটা গুলি আটকে আছে মেরুদণ্ডে। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও গুলি বের করতে পারেননি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি খরচে গতকাল সকাল ১১টায় তাকে থাইল্যান্ড পাঠানো হয়। যাওয়ার আগে হাসপাতালে রিয়েল এবং তার মা মোছা. তাসলিমার সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের । </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাসলিমা আক্তার বলেন, গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় ছেলে। পেটের বিভিন্ন অংশে চারটি গুলি লাগে। একটি গুলি তলপেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়। দুইবার অপারেশন করে দুটি গুলি বের করা হয়। একটি এখনো রয়ে গেছে। দুই মাস চেষ্টা করেও চিকিৎসকরা এটা বের করতে পারেননি। ছেলে এখন বসতে পারে না। ভালো করে শুতে পারে না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রিয়েল মিরপুরের দুয়ারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পৌর এলাকায়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আবু হুরায়রা ও রিয়েলের চেয়ে একটু ভালো আছেন খিলগাঁও তালতলা এলাকার বাসিন্দা আজাহার মিয়া (৪০)। গতকাল বিএসএমএমইউয়ের পরিচালকের কক্ষের সামনে কথা হয় আজাহারের সঙ্গে। তিনি এসেছেন পরিচালককে বলে বিনা মূল্যে কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজাহার জানান, গত ১৯ জুলাই রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। কোমরের ওপরের অংশে গুলি লেগে বের হয় পেটের ডান পাশ দিয়ে। এর পর থেকে তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। পরিবার-সন্তান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমানের কক্ষের সামনে এমন আরো প্রায় ১৫ জন আহত ব্যক্তিকে দেখা যায়। তাঁরা সবাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউয়ে আসেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ আহত ২২৩ জনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচার হয়েছে দেড় শতাধিক। এর মধ্যে অন্তত ৭০ জন গুরুতর আহত। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩২ জন। মারা গেছে তিনজন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডা. মো. রেজাউর রহমান বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এখন যেসব রোগী আসছে, তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বা অস্ত্রোপচার হয়েছে। রিভিউয়ের জন্য আসছে। তাদের অনেকে শারীরিক দিক দিয়ে স্থায়ীভাবে অক্ষম। আমরা আহতদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপত্র, অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় চিকৎসাসামগ্রী সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দিচ্ছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল বিএসএমএমইউয়ের কেবিন ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি সাতজন রোগীর মধ্যে একজন গুলিতে আহত। অন্যরা বিভিন্নভাবে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে ১০ জন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>