<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৯ সালের ২০ জুন। রাজধানীর মিরপুর থেকে নিখোঁজ হন ইসমাইল হোসেন। এরপর পিতার সন্ধান চেয়ে বহুবার পথে দাঁড়িয়েছে তাঁর কিশোরী কন্যা। একটি ছবিতে দেখা যায়, দুই হাতে কাঠ ব্যবসায়ী পিতার ছবি আঁকড়ে ধরে আছে সে। ছবিটি পরদিন ছাপা হয় সংবাদপত্রের পাতায়। দুই বছর আগের সেই ছবির পাশে মেয়েটি নীল কালি দিয়ে লিখে রেখেছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনে হয়, বাবা যেন বলছে আমায়, আয় খুকু আয়। বাবা এভাবেই তোমার ছবি হাতে নিয়ে বছরের পর বছর রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন হাহাকারভরা অসংখ্য ছবিতে পূর্ণ হয়ে আছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারি। সেখানে চলছে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফরম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ের ডাক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর আয়োজনে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুম : জান ও জবান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম হওয়া মানুষের পরিবারের অসহায় চিত্র উঠে এসেছে। স্বজনহারা মা, বোন, সন্তান ও পিতার এসব ছবি যেকোনো মানুষকে শোকাত্বর করে তোলে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> করা মানুষকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়নাঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের অমানবিক বন্দিশালায় আটকে রাখা হতো। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দু-একজন সেই নারকীয় বন্দিশালা থেকে মুক্তিও পেয়েছেন। কিন্তু এখনো বহু মানুষ ফিরে আসেননি। তাঁদের ফিরে আসার দাবি জোরদার করতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত কয়েক বছরের চেষ্টায় প্রদর্শনীর ছবিগুলো ধারণ করেছেন আলোকচিত্রী মোশফিকুর রহমান জোহান। তাঁর নানা আঙ্গিকের আলোকচিত্রে গুমের শিকার পরিবারের দৈনন্দিন জীবন, প্রিয় মানুষকে ছাড়া তাদের চালিয়ে যাওয়া পারিবারিক সংগ্রাম, বেঁচে থাকার আশা-হতাশা নিবিড়ভাবে ফুটে উঠেছে। প্রিয়জনকে তুলে নেওয়ার সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র, দীর্ঘদিন ধরে গুম হয়ে থাকা স্বজনকে ডায়েরির পাতায় স্মরণ, দৈনিক সংবাদপত্রের পাতায় গুমের খবর, স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আর্তনাদের চিত্র স্থান পেয়েছে এসব ছবিতে। প্রদর্শনীটি সাজিয়েছেন সরকার প্রতীক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্মরণে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীর কিউরেটর সরকার প্রতীক বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা আশা করিনি যে এই গল্পগুলো কোনো দিন জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারব। কিন্তু এই নতুন বাস্তবতার, নতুন বাংলাদেশে এই কাজগুলো প্রদর্শন করার সুযোগ হলো। আশা করি, আমাদের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরো অনেকে তাঁদের গল্প বলতে অনুপ্রাণিত হবেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল রবিবার বিকেলে চোখেমুখে বেদনা নিয়ে দুজন দর্শক ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো দেখছিলেন। ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একজন সঙ্গীকে বললেন, এই বেদনার কথা কোনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যে ছবিটি দেখে তাঁদের এই মন্তব্য, সেটি সন্তান হারানো এক মায়ের কান্নার। বয়স্ক এই নারীর চাঁপা কান্না কঠিন হৃদয়কেও তছনছ করে দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্যালারির এক কোণে সাজানো হয়েছে শুধু সংবাদপত্রের কাটিং দিয়ে। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিলের একটি দৈনিকের পাতার শিরোনাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুম শব্দটা দুই অক্ষরের, যন্ত্রণা যুগের পর যুগের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সঙ্গে ছাপা হয়, গুমের শিকার একজন ব্যবসায়ীর ছবি উঁচিয়ে ধরে কান্নারত স্ত্রীর ছবি। মায়ের ডাকের সংবাদ সম্মেলনের এই সংবাদের পাশে সন্তান কলম দিয়ে লিখে রেখেছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবা, তোমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য আম্মুর আপ্রাণ চেষ্টা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span>  </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলোকচিত্রী মোশফিকুর রহমান জোহান বিভিন্ন সময়ে স্বজনহারা এসব পরিবারের আর্জি ক্যামেরায় বন্দি করেছেন। এসব ছবিতে প্রিয় মানুষকে জীবিত খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা, আকাঙ্ক্ষা ও আকুলতা জীবন্ত হয়ে ধরা পড়েছে। আলোকচিত্রী জানান, তিনি ২০১৮ সালে প্রথম গুম নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে বিভিন্ন কারণে সে সময় তিনি তা করে ওঠতে পারেননি। ২০২০ সালে নিজের পিতার মৃত্যুর পর আরেকবার গুম হওয়া মানুষের জন্য কাজ করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন। সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী এবং মায়ের ডাকের সহায়তায় তিনি কাজটি করছেন। জোহান জানান, কাজটি করতে গিয়ে নিজেও গুম হওয়ার ভয়ে, আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীটি চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। শুক্রবার আড়াইটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনীর দুয়ার খোলা। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। এ ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত।</span></span></span></span></p>