<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামগঞ্জের হতদরিদ্র নারীরা কোলে-পিঠে শিশুসন্তান নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরে ঘুরে নাম উঠিয়েছিলেন সরকারের মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায়। ভাতার এই তালিকায় নাম ওঠাতে অনেককে দিতে হয়েছে ঘুষ। কিন্তু ভাতার কার্ড হওয়ার পর মাসের পর মাস ঘুরেও পাচ্ছেন না টাকা। প্রতারকচক্রের ফাঁদে পড়ে ভাতার টাকা হারাচ্ছেন শত শত হতদরিদ্র নারী। কৌশলে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে এই নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ নিয়ে গত এক বছরে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে জমা পড়েছে চার শতাধিক লিখিত অভিযোগ। কিন্তু তার পরও পাননি ভাতার টাকা। কারা, কিভাবে ভাতার এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, তার সঠিক জবাবও দিতে পারছে না কেউ। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন সচিব, মেম্বার ও সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাতার আবেদনে সুবিধাভোগীর দেওয়া বিকাশ, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর কৌশলে পরিবর্তন করে নিজেদের পছন্দের কারো অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরাও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। ফলে প্রকৃত ভাতাভোগীর অ্যাকাউন্টে টাকা না গিয়ে চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের দেওয়া অ্যাকাউন্টে। যদিও চেয়ারম্যানরা বলছেন, অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুলের ঘটনাগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ঘটছে। এতে তাঁদের হাত নেই।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভাওয়াল ইউনিয়নের বারখাদিয়া গ্রামের জাকারিয়া মাতুব্বরের স্ত্রীর রত্না আক্তার ২০২৩ সালে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি (ডাচ্-বাংলা ব্যাংক হিসাব-৭০১৭৩৩৭০৯১৮৯৮) অ্যাকাউন্ট নম্বরটি দেন। যাচাই-বাচাই শেষে রত্নার ভাতার কার্ডও হয়। ওই বছর ডিসেম্বর থেকে ভাতার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা আসেনি। পরে দেখা গেছে, তাঁর নামে টাকা পাঠানো হলেও ওই টাকা চলে যাচ্ছে ভিন্ন একটি (০১৮৬৭৯৩৩১৫৯২) রকেট নম্বরে। রত্না আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডিসেম্বর থেকে আট হাজার টাকা ওই নম্বরে ঢুকেছে। বিষয়টি আমি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সচিবসহ অন্যদের জানালে তাঁরা জানান, ভুলে অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে। পরে আমি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বর ঠিক করি। তবে আগের টাকা আর ফেরত পাইনি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গট্টি ইউনিয়নের খর্দলক্ষ্মণদিয়া গ্রামের রবিউল কাজীর স্ত্রী কারিমা আক্তারের ভাতার আবেদনে ০১৭৫৯৩১৭৪৪২ বিকাশ নম্বরটি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর টাকা চলে যাচ্ছে ০১৭৬৬১১৫১২১ বিকাশ নম্বরে। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বল্লভদী ইউনিয়নের বাউষখালী গ্রামের এনামুল মোল্লার স্ত্রী তাহমিনা খানম ভাতার জন্য তাঁর আবেদনে ০১৭৯৫৬১৫১৭০ বিকাশ নম্বরটি দেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাঁর ভাতার টাকা ০১৮৪৫৬৭৮৭৯৬ বিকাশ নম্বরে চলে যাচ্ছে। ওই নম্বরে তাহমিনার ভাতার ১০ হাজার টাকা ঢুকেছে। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রত্না, তাহমিনা, কারিমার মতো গত এক বছরে সালথা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চার শতাধিক নারীর লাখ লাখ টাকা এভাবে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুবিধাভোগী একাধিক নারী বলেন, কোলে-পিঠে শিশুসন্তান নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভাতার কার্ড করেছি। ভাতা পেতে ইউপি সদস্য, সচিব ও সংশ্লিষ্টদের এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। অথচ অ্যাকাউন্ট নম্বর পাল্টিয়ে আমাদের ভাতার টাকা কারা মেরে খাচ্ছে বুঝতে পারছি না। এসব বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বল্লভদী ইউনিয়নের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর ইউনিয়নে একজন ভাতাভোগীর নম্বর ভুল হয়েছিল, পরে সেটা ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া কারো নম্বর ভুল হয়নি। যদিও উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ বল্লভদী ইউনিয়নের সুবিধাভোগী নারীরা করেছেন।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যদুনন্দী ইউনিয়নের সচিব মো. এনায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুবিধাভোগীদের আবেদনে ভুলক্রমে দু-একটি নম্বর ভুল হতে পারে। সিন্ডিকেট করে অন্য কারো অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। ভাতাভোগীদের কাছ থেকেও কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। শুধু আবেদন ফি বাবদ ২০০ টাকা নেওয়া হয়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমার ইউনিয়নে একজন ভাতাভোগীর নম্বর ভুল হয়েছিল। তাঁর টাকা রাজশাহীর একজনের নম্বরে ঢুকত। পরে সেটা ঠিক করেছি। তবে যতটুকু জানি, অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুলের ঘটনাগুলো মন্ত্রণালয় থেকে ঘটে। আমাদের পরিষদ থেকে কারো নম্বর ভুল হয় না।  আর ভাতাভোগীদের কাছ থেকে একটি টাকাও পরিষদের কেউ নেয় না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সালথা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডালিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২৩-২৪ অর্থবছরে সালথায় দুই হাজার ৫৪৫ জন নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ভুল অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার ঘটনায় চার শতাধিক ভাতাভোগীর লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর অনেকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ঠিক করা হয়েছে। তবে যাদের টাকা যেসব নম্বরে ঢুকেছে, সেসব নম্বর বন্ধ থাকায় টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী কালের কণ্ঠকে বলেন, মা ও শিশু সহায়তা প্রকল্পের অধীনে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কার্যক্রমে ভাতাভোগী নির্বাচন করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায় একটি কমিটি আছে। সেই কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে ভাতাভোগী নির্বাচন করেন। এখানে যদি কেউ টাকা লেনদেন করে থাকে, সে ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভাতার টাকা হাতিয়ে নেওয়া, কিংবা ভাতা পেতে টাকা নেওয়ার  বিষয়গুলো আমার জানা নেই। অনিয়মের এসব বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p>