<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> এসব আয়াত থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, দৈহিক ইবাদত ও আর্থিক ইবাদতের মধ্যে পার্থক্য করা মহাভুল। যেখানে দৈহিক ইবাদত নামাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানেই আর্থিক ইবাদত জাকাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে যাদের মানুষ ধার্মিক মনে করে এবং তাদের ভেতর ধর্ম পালনের আগ্রহও দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা দ্বিন পালনের একটি মনগড়া রীতি ও পদ্ধতি তৈরি করে নিয়েছে। তারা মনে করে, শারীরিক ইবাদতেই দ্বিনদারি সীমাবদ্ধ। তারা আর্থিক ইবাদত, যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাকাত, দান ও সদকা থেকে পুরোপুরি বিমুখ। আমাদের অনেকের অবস্থাই এমন, যাদের জীবনে দানের কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে আমরা দ্বিন ও শরিয়তকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছি এবং মনমতো এর কিছু অংশ গ্রহণ করেছি আর কিছু অংশ ত্যাগ করেছি। অথচ এটি মুমিনের জন্য একটি মস্ত বড় ত্রুটি। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে মুমিনদের সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান করো? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অনবহিত নন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৮৫)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আবার অনেকে শারীরিক ইবাদতের মধ্যেও নানা পার্থক্য তৈরি করে বসে আছে; যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেউ শুধু পীরের নির্দেশিত অজিফা আদায় করেন, কোরআন তিলাওয়াত করেন না। আবার অনেকে শুধু তিলাওয়াত করেন, নফল জিকির, মাসনুন দোয়া ও অজিফাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। এটাও নিন্দনীয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আর্থিক ইবাদতের ক্ষেত্রেও নানারূপ বিভক্তি আছে; যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অনেকেই আর্থিক দানের ক্ষেত্রে মসজিদকে প্রাধান্য দেয়। সমাজে প্রচলিত আছে, মসজিদে আলো জ্বাললে কবরে আলো জ্বলে। কোনো কোনো স্থানে প্রয়োজন না থাকার পরও মানুষ মসজিদে দান করতে থাকে, অন্যদিকে একই গ্রামে একটি মক্তবও সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায় না। অথচ মসজিদের মতো মুসলিম শিশুদের দ্বিনি শিক্ষাও নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব মানুষ ভেবে দেখে না, আমরা যদি শিশুদের দ্বিনি শিক্ষা না দিই, তাহলে ভবিষ্যতে এই মসজিদে নামাজ কারা পড়বে? ভালোবাসা নিয়ে এই মসজিদের দেখাশোনা কারা করবে? আবার অনেকে মাদরাসা-মসজিদের উন্নতি করলেও সমাজের অসহায় মানুষের ভালো-মন্দের কোনো খোঁজ রাখে না। তাদের সাহায্য করাকে ইবাদত মনে করে না। মুমিনের দায়িত্ব হলো, শরিয়তের বিধি-বিধান পালনে ভারসাম্য রক্ষা করা। কোনো একদিকে এমনভাবে ঝুঁকে না যাওয়া, যাতে আরেকটি ইবাদত ছুটে যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এটাই বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হে মুমিনরা! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০৮)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি আর্থিক ইবাদতের কথা বলছিলাম। নামাজ-রোজা, তাহাজ্জুদ ও জিকিরের মতো জাকাত দেওয়া, হজ করা, সদকা করা, অসহায় ও দুর্বল মানুষকে সাহায্য করা, আত্মীয়তার হক আদায় করাও মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা কোরআনের বহু স্থানে আর্থিক ইবাদতকে শারীরিক ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত করে বর্ণনা করেছেন; যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুমিন উভয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে। আল্লাহ মানবজাতির মহান স্রষ্টা। তিনি মানুষের মনোভাব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। তিনি সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ, মায়া ও দুর্বলতার কথা জানেন বলেই শারীরিক ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ইবাদতের কথাও বলেছেন। বরং কোনো কোনো স্থানে আর্থিক ইবাদতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইরশাদ হয়েছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আর সংগ্রাম করো আল্লাহর পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে!</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪১)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা সাদি বলেন, আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ উভয়টি উৎসর্গ করা ওয়াজিব। যেন (সম্পদ দানের মাধ্যমে) দ্বিনি কাজের প্রয়োজন ও দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়। (তাফসিরে সাদি)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ জীবনের আগে সম্পদ উৎসর্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, আল্লাহ সম্পদের কথা প্রথমে বলেছেন। কেননা আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করতে থাকলে একসময় জীবন উৎসর্গ করার মতো মানসিকতা তৈরি হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>