<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাগতিক ও ধর্মীয় কল্যাণ অর্জনে শিশুদের উত্তম শিষ্টাচারে অভ্যস্ত করানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। কারণ প্রতিটি শিশুর শৈশবের জীবনটাই তার মেধা, মন ও রুচিশীল স্বভাব-প্রকৃতি গড়ে তোলার প্রকৃত সময়। কিন্তু অনেক অভিভাবককে এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির সীমাতিক্রম করতে দেখা যায়। ফলে সন্তান হয় একরোখা, বদমেজাজি ও আত্মপ্রত্যয়হীন। তাই ইসলাম সন্তানের শিষ্টাচারের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে এবং শাসনের ক্ষেত্রে সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামী আইনশাস্ত্রের গ্রন্থে আছে, সন্তানকে সুশিক্ষা দেওয়া পিতামাতার ওপর ফরজ। তাই কোরআন তিলাওয়াত, আদব ও ইলম শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে সন্তানকে বাধ্য করারও অধিকার আছে একজন পিতার। ইসমাইল বিন সাইদ (রহ.) বলেন, আমি ইমাম আহমদ (রহ.)-কে সন্তানের প্রহারের বৈধ কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, সন্তানকে আদবের জন্য প্রহার করা যাবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, নামাজের জন্য কি প্রহার করা যাবে? তিনি জবাব দিলেন, ১০ বছরে উপনীত হলে তখন প্রহার করা যাবে। ফিকহের প্রসিদ্ধ কিতাব </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাহরুর রায়েক</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-এ বর্ণিত হয়েছে, শাসনের ক্ষেত্রে পিতামাতা ও উস্তাদের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ করা জরুরি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রথমত, তাদের উপদেশ দেওয়া। কৃত অন্যায় আচরণের ব্যাপারে বারবার সতর্ক করা। হাদিস শরিফে এসেছে, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাজের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স ১০ বছর হয়ে যাবে তখন (নামাজ আদায় না করলে) এ জন্য তাদের মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দেবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উপরোক্ত হাদিসে সাত বছর বয়সে নামাজের আদেশ দিতে বলা হয়েছে আর ১০ বছর বয়সে প্রহারের নির্দেশ এসেছে। নসিহত ও প্রহারের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান তিন বছর। এ হাদিসের প্রতি লক্ষ করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে শিশুর শাসন ও তারবিয়াতে কতটা ধৈর্য ধরতে হবে। তবে কোনো অবস্থায়ই চেহারায় চড়-থাপ্পড় দেওয়া যাবে না। কিন্তু অনেক অভিভাবক ও উস্তাদদের এ কাজটি করতে দেখা যায়। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তোমাদের কেউ প্রহার করার সময় যেন মুখমণ্ডল থেকে বিরত থাকে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৯৩)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমনকি একই সময়ে ১০ বারের বেশি বেত্রাঘাত করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল বলতেন, আল্লাহর নির্ধারিত হদসমূহের কোনো হদ (ইসলামী দণ্ড) ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ১০ কশাঘাতের ঊর্ধ্বে দণ্ড প্রয়োগ করা যাবে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(আল লুলু ওয়াল মারজান, হাদিস : ১১১০)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কারণ এসব অঙ্গে আঘাত করলে ক্ষতি কিংবা খুব বেশি যন্ত্রণার আশঙ্কা থাকে। তাই রাগান্বিত অবস্থায় যেন এসব জায়গায় শাস্তি প্রদান না করা হয়। তবে কোনো কারণে অত্যধিক রাগ উঠলে বেশি পরিমাণে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আউজুবিল্লাহ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা রাখা। পাশাপাশি দুষ্ট ও অবাধ্য সন্তানের হিদায়াতের জন্য কোরআনে বর্ণিত সুন্দর সুন্দর দোয়া বেশি বেশি পাঠ করা। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুরা ইবরাহিমে বর্ণিত হয়েছে, অর্থ : </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অতএব, মনে রাখতে হবে সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। শিশুরা অবুঝ, তবে তারা অপরাধী নয়। তাদের শাসন করার অর্থ হলো সুশিক্ষা দেওয়া। শাসনের প্রথম স্তর হলো নসিহত ও সতর্কীকরণ আর প্রহার হলো সর্বশেষ স্তর। তাই নিজের রাগ-ক্ষোভ ও প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে কোমলমতি শিশুর ওপর চড়াও হওয়া বিবেকবান মানুষের কাজ হতে পারে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>