<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ২০১১ সালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে ১৪ বছর পার করলেও তাদের অর্জন প্রায় শূন্য। এই সময় প্রতিষ্ঠানটির পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৮৮ কোটি টাকা। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে তারা মাত্র একটি গবেষণাকাজ শেষ করতে পেরেছে। তবে এই গবেষণা শেষে ১০টি প্রকাশনা বের করার কথা থাকলেও মাত্র একটি প্রকাশনা বের করেই তাদের দায়িত্ব সেরেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশ সরকার একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে প্রায় ১৯৪ কোটি ৯ লাখ টাকায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অনুমোদিত হয়। ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করা হয়। সেই হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স ১৪ বছর। বর্তমানে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির এক একরের বেশি জায়গা রয়েছে। যেখানে ছয়তলা একটি ভবন রয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ১২ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইনস্টিটিউটের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ১৭টি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদসহ মোট ৯৮টি অনুমোদিত পদ আছে। জনবল কাঠামোতে ৯৩টি পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে এখানে ৬৪ জন কাজ করছেন। কোনো গবেষক আজ পর্যন্ত এখানে নিয়োগ পাননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, আগে প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় বার্ষিক বাজেট ছিল ছয় কোটি টাকা। সেই বরাদ্দ এখন বৃদ্ধি পেয়ে আট কোটি টাকার ওপরে চলে গেছে। তবে যদি ১৪ বছরে ছয় কোটি টাকা করে ব্যয় ধরা হয়, তাহলে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। এই টাকা মূলত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে ব্যয় হয়েছে। আর নির্মাণ ব্যয় ১৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করলে এই প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারের ১৪ বছরে খরচ হয়েছে ২৭৮ কোটি টাকা। অথচ এই সময় তারা মাত্র একটি গবেষণাকাজ শেষ করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র বড় আকারের কাজ </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নৃ-ভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভাষা-পরিস্থিতি ও ভাষিক সম্প্রদায়ের অবস্থা ও অবস্থান জানার জন্য ২০১৪ সালে এ কাজ শুরু হয়। সমীক্ষা শেষে ১০টি বাংলা ও ১০টি ইংরেজি গ্রন্থ প্রকাশ করার কথা ছিল। ২০১৬ সালে শেষ হয় এই সমীক্ষা। তবে এখন পর্যন্ত একটি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বই আকারে ছাপানো হয়েছে। এরপর আর কোনো গ্রন্থই প্রকাশ করা হয়নি। এ সমীক্ষায় বাংলাসহ ৪১টি ভাষার অস্তিত্ব মিলেছে। এর মধ্যে ৩৪টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১০-এ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বের ব্যাপারে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও ক্ষুদ্র জাতিগুলোর ভাষা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, এসংক্রান্ত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা; বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা আন্দোলন বিষয়ে গবেষণা; বাংলা ভাষার উন্নয়নে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনা; বাংলাসহ পৃথিবীর সব ভাষার বিবর্তনবিষয়ক গবেষণা; ভাষা বিষয়ে গবেষণার জন্য দেশি-বিদেশিদের ফেলোশিপ প্রদান; ভাষা ও ভাষাবিষয়ক গবেষণায় অবদানের জন্য দেশি ও বিদেশিদের পদক ও সম্মাননা প্রদান; ভাষা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বৃত্তি প্রদান; গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নিচতলায় বড় পরিসরে তৈরি করা হয়েছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাষা জাদুঘর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। ২০২৩ সালে এটি উদ্বোধন করা হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়নি। এই জাদুঘরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভাষার নমুনা, জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কিছু তথ্য-উপাত্ত ও ছবি রয়েছে। আর সাততলায় করা হয়েছে ভাষার লিখন রীতির আর্কাইভ। তবে এগুলো এখনো জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইনস্টিটিউটের একাধিক বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিভিন্ন দিবস পালন ও সরকারের গতানুগতিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনেই বছরের বেশির ভাগ সময় পার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে ভাষা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সেমিনার ও সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, যা খুবই নগণ্য। তবে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একটি বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তাদের মূল কাজ না করলেও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করতেন তাদের বিকল্প অফিস হিসেবে। সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাদের অফিস থাকলেও সেখানে তারা বসতেন না বললেই চলে। এটা যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান, তাই তারা এখানে বসে নানা তদবির শুনতেন। শিক্ষা ক্যাডারে বদলিসহ অন্যান্য যা কিছু সিদ্ধান্ত হতো তা এখানেই হতো। এমনকি এই অফিসে বসে মন্ত্রীদের স্টাফরা তাদের পক্ষে নানা ধরনের আর্থিক ডিল করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এখানে তারা রাজনৈতিক সাক্ষাৎও দিতেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ ছেড়ে এখানে প্রায়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা ধরনের প্রগ্রাম আয়োজন করা হতো। যেখানে মন্ত্রী-সচিবরা উপস্থিত থাকতেন। গত ছয় বছর এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাব অফিস হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে মন্ত্রী, সচিব ও তাদের পিএসদের কক্ষও করা হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজেদের কাজ ছেড়ে সব সময় ভিআইপিদের প্রটোকলেই বেশি ব্যস্ত থাকতেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গত ১৪ বছর মাত্র দুজন স্থায়ী মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বছর ধরে চুক্তিতে এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিন্নাত ইমতিয়াজ আলী দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। আর দুই বছরের চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ। তার মেয়াদ শেষ হয় এ বছরের মার্চে। এরপর এই প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রামে পরিবর্তন আসে। বাদ দেওয়া হয় মহাপরিচাক পদটি। এখন সর্বোচ্চ পদ পরিচালক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দুই বছর মেয়াদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক পদ নেই, সেখানে গবেষণা হবে কিভাবে? আমরা আরো ৭০টি পদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সেখানে যথেষ্টসংখ্যক গবেষক পদ থাকবে। তবে এত দিন একেবারেই যে কাজ হয়নি তা কিন্তু নয়। ভাষা নিয়ে কাজ হয়েছে। যেসব ভাষা বিপন্ন অবস্থায় আছে সেগুলো অনুশীলন হয়েছে, নথিবদ্ধ হয়েছে। একটি গবেষণাও হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর অনুবাদের কাজ শুরু করেছি। আরো কিছু কাজের পরিকল্পনা করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>