<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত প্রায় তিন মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সামাজিক বিরোধে অন্তত ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ১১ হাজার। এর মধ্যে গত অক্টোবর মাসে ৯১ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৮৪ জন এবং আগস্টে ৫৪১ জন নিহত হয়। এ সময় গণপিটুনিতে নিহত হয় ৮৪ জন। ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনাও উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন সূত্রে এই তথ্য মিলেছে।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে লম্বা সময় মাঠে ছিল না পুলিশ। অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুটের পাশাপাশি কারাগার থেকে আসামি পলায়নের ঘটনাও ঘটে। এরপর তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতা এবং পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই ও দখলদারির ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">থানা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের বেশির ভাগ এখনো উদ্ধার হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে। অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়িতে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। গত অক্টোবরে দেশে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবাধিকার সংস্থা এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে অন্তত ২৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। আগের দুই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৬৫। সর্বশেষ নড়াইল সদরে গরুচোর সন্দেহে দুলাল ও নুরনবী নামের দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৮টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছে ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪১২ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। অন্য তিনজন বিএনপির। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সহিংসতার ৫৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৭টি ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলজনিত, ১৭টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্বে, দুটি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে এবং দুটি ঘটনা ঘটেছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্বে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া অক্টোবর মাসে ২৮৮টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৫১টি ধর্ষণ, ১৫টি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বর মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৩৫টি। সেপ্টেম্বরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১০টি। অক্টোবর মাসে তা বেড়েছে। এই মাসে ২৩টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অক্টোবর মাসে ৫৩টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ পাওয়া গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪৯। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হত্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে গুলি</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় জেনেভা ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয় কাল্লু ওরফে জানে নেওয়াজ। নিহতের স্ত্রী আফসানা বলেন, গত বুধবার রাতে ক্যাম্প এলাকায় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোহাম্মদপুর থানার ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় একদল চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে শটগান হাতে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাত হোসেনের নাম জানতে পেরেছে পুলিশ। এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে অস্ত্র নিয়ে সেখানে হামলা চালান তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই সাজ্জাত বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় গত সোমবার চট্টগ্রামে দিনদুপুরে আফতাব উদ্দিন তাহসীন নামের স্থানীয় এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, অবৈধ অস্ত্রে খুনাখুনির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত চলছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৩১৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭৪ জন সন্ত্রাসীকে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে রিভলভার ১৯টি, পিস্তল ৭৬টি, রাইফেল ২২টি, শটগান ৩৭টি, পাইপগান আটটি, শ্যুটার গান ৪৩টি, এলজি ৩১টি, বন্দুক ৪৮টি, একে৪৭ একটি, এসএমজি পাঁচটি, গ্যাসগান চারটি, এয়ারগান ১০টি, এসবিবিএল ১০টি, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার দুটি এবং থ্রি কোয়ার্টার দুটি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, এখনো অনেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে থানা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সেসব অস্ত্রও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ কাঁচাবাজার মার্কেটের অফিসকক্ষে ঢুকে মার্কেটটির সভাপতি আবুল হোসেন এবং তাঁর ছোট ভাই মাহবুবকে প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এভাবে গত মাসে এ এলাকায় একাধিক গুলির ঘটনা ঘটে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চুরি ডাকাতি ছিনতাইয়ে বিপাকে পুলিশ</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত, এমনকি দিনদুপুরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে রাজধানীর ৫০টি থানার পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দারা কাজ করছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর মধ্যে ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সড়ক, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তারা বেশি হানা দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের গ্রাহকদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। আর ভোরের দিকে বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও নিরিবিলি অন্ধকার সড়কে রিকশাযাত্রীদের নিশানা বানিয়েছে ছিনতাইকারী ও ডাকাতদলের সদস্যরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অনেক সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিল্প-কারখানায় টানা অস্থিরতা</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও বিভিন্ন দাবিতে সড়কে আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা থেমে নেই। সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন বেশি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে একজন শ্রমিক নিহত হন। এরপর সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে গুলিতে দুই গার্মেন্টসকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ পোশাক শ্রমিক আল আমিন (১৮) ও ঝুমা আক্তারকে (১৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাজার আখড়া ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাঙচুর</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গত তিন মাসে বেশ কিছু মাজার, ধর্মীয় উপাসনালয় ও আখড়ায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম চৌধুরী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব তৎপর রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষক নুর খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গুলিতে অনেক মানুষ মারা গেছে। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দ্রুত এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>