<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পালাবদলে এখন বিপাকে আওয়ামী লীগ। সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে দলটির শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের বেশির ভাগ আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত যাওয়ার মধ্য দিয়ে এই যাত্রার শুরু। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে না থাকলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ভারতে আশ্রয় নেন। ভারতও নানা কৌশলে প্রকাশ্যে বা গোপনে তাঁদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ যখন বেশ বেকায়দায়, তখন দলটির অনেক নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ওই সময় প্রায় ছয় বছর ভারতের আশ্রয়ে ছিলেন।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এবারও ব্যতিক্রম  ঘটেনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক শ নেতা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তবে বেশিসংখ্যকের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতার নিউটাউন, মারকুইজ স্ট্রিট ও সল্টলেক এলাকায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সবাই যে একেবারে অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছেন, বিষয়টা তেমন নয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান কৌশলী। সরাসরি ভিসা না থাকায় তাঁরা ট্রাভেল পাস নিয়ে সে দেশে অবস্থান করছেন। সর্বোচ্চ ৯০ দিনের ট্রাভেল পাস পাওয়ার বৈধতা রয়েছে। মূলত কোনো দেশে বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বিকল্প বৈধতা হিসেবে হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করানো যায়। কিন্তু সেই ট্রাভেল পাস দিয়ে বিদেশের এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। শুধু নিজ দেশে ফেরার সুযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভারত পৌঁছতে বেশির ভাগই দেশের যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত ব্যবহার করেছেন। তারপর তাঁরা প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা, আগরতলা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে অবস্থান নিয়েছেন। সেখান থেকে কেউ দুবাই, কেউ জার্মানি, কেউবা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। যাঁরা ভারত ছাড়তে পারেননি, তাঁদের বেশির ভাগই কলকাতায় অবস্থান করছেন। আবার চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতারা দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে নৌপথ ব্যবহার করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে এমপি হওয়া মহিবুল হাসান নওফেল ও হাছান মাহমুদের চট্টগ্রাম বন্দরে আধিপত্য ছিল।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে তাঁরা ভারত গেছেন। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশের রাজনীতি করার পরিবেশ তৈরি হলে অনেকেই দেশে ফিরতে প্রস্তুত আছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সমপাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সমপাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হীরু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর ভারতে অবস্থান করছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ছাড়া ভারত গেছেন নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সংস্কৃতিবিষয়ক সমপাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা-১৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সমপাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল, ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও হাজি সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক অপু উকিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিও ক্লিপে কলকাতার একটি পার্কে আসাদুজ্জমান খান কামালকে দেখা গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল, আওয়ামী লীগের দপ্তর সমপাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সমপাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সমপাদক সাগর আহমেদ শামীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সমপাদক সজল কুণ্ডু নিউটাউন এলাকায়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় আছেন সল্টলেক। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সমপাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমপাদক গোলাম সারোয়ার কবীর কলকাতার মারকুইজ স্ট্রিটে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া চব্বিশ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রামে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল মঙ্গলবার ভারতে অবস্থান করা সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ট্রাভেল পাস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁরা যদি দেশে ফিরতে চান, ট্যাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে এবং তাঁরা দেশে ফিরে আসতে পারেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তৌহিদ হোসেন বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধু দেশে ফেরার জন্য, অন্য দেশে যাওয়ার জন্য নয়। অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। আদালত চাইলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অনেকে কিছুদিন ভারতে অবস্থান করে বা ভারতকে প্রাথমিক </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এক্সিটের</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পথ হিসেবে ব্যবহার করে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। যেমন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রথমে ঢাকা ছেড়ে ভারত যান। পরে সেখান থেকে চলে যান বেলজিয়াম। এভাবে ভারত হয়ে লন্ডন গেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। কানাডায় আছেন সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভারত থেকে লন্ডন গেছেন সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমপাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, সাবেক চার এমপি রনজিত চন্দ্র সরকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাজ্জাদুল হাসান ও সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য সানজিদা খানম ও গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অনেকে ভারত যাওয়ার পথে সীমান্তে আটক হয়েছেন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আওয়ামী লীগের নেতার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ভারতে পালাতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সমপাদক ইসহাক আলী খান পান্না। তিনি সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার পর গত ২৪ আগস্ট মারা যান। কেউ কেউ পিটুনির শিকার হচ্ছেন। ২৩ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় আটক হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতারাই নন, লুকিয়ে থাকার তালিকায় আছেন পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্তারাও। পুলিশের আলোচিত চরিত্র হারুন অর রশীদ কোথায়? এর উত্তর কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। তবে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনকে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তিনি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দেশ ছেড়ে নিউ ইয়র্ক স্টেটের লং আইল্যান্ডে চলে গেছেন বলে একটি সূত্র বলেছে। এ ছাড়া আলোচিত অন্য পুলিশ সদস্যদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>