<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিধ্বস্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঢেলে সাজাতে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এতেই এক মাসের মধ্যে ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে এই খাতে। ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার রোধ, মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গত এক মাসে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। গত দুই বছরে এই সংকট আরো গভীর হয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থপাচার, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, ডলার ও রিজার্ভ সংকটে ব্যাংক খাতের ক্ষত আরো গভীর হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটিও পালন করেননি ওই সময়ের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এতে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থাহীনতা বেড়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন সংকটময় মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। গত ১৩ আগস্ট সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পরদিন ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি এক মাস পূর্ণ করেছেন। সময় কম হলেও এই সময়ে তিনি বেশ কিছু সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন। সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হচ্ছে, একক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংক খাতকে মুক্ত করেছেন। সব মিলিয়ে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতের সংস্কারে আরো একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে আগামী দিনে যেমন ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত হবে, সেই সঙ্গে বন্ধ হবে ব্যাংক লুটপাট ও অর্থপাচার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৪-১৫ বছরে ব্যাংকিং খাতে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এই খাতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে বড় রকমের সংস্কার দরকার। বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের হাতেই এই সংস্কার সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> রেমিট্যান্স প্রবাহের বিষয়ে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান গভর্নরের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন সব ব্যাংক মিলেমিশে কাজ করছে। মার্কেটে স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরেও আগস্টের তুলনায় রেমিট্যান্স বেশি আসবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংক খাতে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা আবার ফিরতে শুরু করেছে। সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল, এতে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থাহীনতায় ওই সময় ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে গিয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা আবার ব্যাংকে ফেরত এসেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের অন্যতম নীতি হলো ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন এবং অপচয় রোধ করা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ যাতে খুব বেশি না বাড়ে, সেদিকেও বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক হিসেবে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিত সরকার। তবে এখন থেকে বিদেশে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী বা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিদের ক্ষতিপূরণ বাবদ আসা রেমিট্যান্সের বিপরীতেও আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে এসেছে ১১৬ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে আট কোটি ৩৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। আর আগস্টের ১৪ দিনে দেশে এসেছিল ১১৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সে হিসাবে চলতি মাসেও বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সেপ্টেম্বরে আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে যাওয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির কারণে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। দায়িত্ব্ব গ্রহণের পরপরই নতুন গভর্নর ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট চালু করায় ব্যাংকগুলো ডলার লেনদেনের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করতে পারে। এটিও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে নেওয়া এসব উদ্যোগে রিজার্ভ স্থিতিশীল হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮.৫৭ শতাংশ বেশি। এর পরও গভর্নর ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, সবাই এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। তবে দেশের মোট জিডিপির তুলনায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা খুবই নগণ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় ২০২২ সালে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিক পণ্যের ওপর শতভাগ মার্জিন আরোপের পাশাপাশি ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার ফলে তা তুলে নিয়েছে সংস্থাটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৩ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি আরো সংকোচনমূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশে নির্ধারণ করেছে। এর ফলে সব ধরনের সুদের হার বেড়ে যাবে। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে। এর ফলে তা মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ভুল নীতির কারণে ব্যাংক খাত যখন খাদের কিনারে, তখন অন্তর্বর্তী সরকার এসেই স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফরে সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুরকে গভর্নর নিয়োগ দেয়। দায়িত্বে এসেই তিনি টাকা পাচারকারীদের ঘুম হারাম করে দেবেন বলে হুংকার দেন। এর ইতিবাচক ফল ক্রমেই পুরো ব্যাংক খাতে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।</span></span></span></span></p>