<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বুধবার, ২২ মার্চ। রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ফটকে কয়েকজনের জটলা। তাঁরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুজনকে পাওয়া গেল তিন দিন ধরে আসছেন; কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দেখা মিলছে না। কোনো কর্মকর্তা অফিসে নেই। কোনো কোনো কর্মকর্তা অফিসে আছেন, কিন্তু চেয়ারে নেই। এই নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন সবাই।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিলেট থেকে আসা এক শিক্ষক (নাম প্রকাশ করা হলো না) কালের কণ্ঠকে বললেন, সিলেট সদরে শিক্ষকদের বদলিসংক্রান্ত কাজ অনলাইনের পরিবর্তে অফলাইনে চলছে। সব কিছু ঠিক থাকার পরও সময়মতো তাঁর বদলি হয়নি। যে দুটি স্কুলে বদলির জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন, সেসব খালি পদ পূরণ হয়ে গেছে। এখন এই সমস্যা নিয়ে পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমার সঙ্গে দেখা করে প্রতিকার চাইতে ঢাকা এসেছেন। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে এখানে আসছি। তিনি অফিসে আছেন বলে কর্মচারীর বলছেন; কিন্তু তাঁকে চেয়ারে পাওয়া যাচ্ছে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাগেরহাট থেকে আসা আরেক সহকারী শিক্ষক বললেন, শুধু পরিচালক নন, অন্য কর্মকর্তাদেরও চেয়ারে পাওয়া যায় না। সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও পারেননি। অফিসে থাকলেও তাঁকে চেয়ারে পাওয়া যাচ্ছে না। এই শিক্ষক বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত রবিবার ও সোমবার দেখা করতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। মঙ্গলবার আসতে মানা করায় আজ (বুধবার) এসেছি, তা-ও দেখা করতে পারিনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব অভিযোগ শুনে অধিদপ্তরের ভেতরে যান এই প্রতিবেদক। একে একে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াতসহ পাঁচজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে। এর আগে ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার ওই দপ্তরে যান এই প্রতিবেদক। ওই পাঁচ কর্মকর্তার কেউই অফিসে নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁরা সবাই পরিচালক।  তাঁদের জন্য সেবাপ্রত্যাশী শিক্ষকরা প্রায় সারা দিন অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে পড়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিদিন সারা দেশের প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে পাঁচ শতাধিক সেবাপ্রত্যাশী এই অধিদপ্তরে আসেন। কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে তাঁরা প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ফিরে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক সপ্তাহের চেষ্টার পর এ বিষয়ে গত বুধবার কথা বলা সম্ভব হয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াতের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি নিরূপণে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকায় তাঁদের পক্ষে প্রায়ই অফিসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মে মাসের পর থেকে এই সমস্যা থাকবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যান এই প্রতিবেদক।  জানা যায়, সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা থাকায় সকাল থেকেই সেবাপ্রত্যাশীদের ভেতরে ঢুকতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। দু-একজন সেবাপ্রত্যাশী অধিদপ্তরে প্রবেশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে অধিদপ্তরে মহাপরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াত ছাড়া ৯টি বিভাগে মোট ছয়জন পরিচালক আছেন। এর মধ্যে কর্মরত আছেন চারজন পরিচালক, বাকি দুজন ছুটিতে। চার পরিচালকের মধ্যে প্রশাসন বিভাগসহ উপবৃত্তি বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন এস এম আনছারুজ্জামান, প্রশিক্ষণ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন উত্তম কুমার দাশ, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন বিভাগসহ মোট তিন বিভাগের দায়িত্বে আছেন শাহীনুর শাহীন খান এবং পলিসি অ্যান্ড অপারেশনের দায়িত্বে রয়েছেন মনীষ চাকমা। ছুটিতে থাকা দুই পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন প্রকিউরমেন্ট বিভাগের মো. হামিদুল হক ও অর্থ বিভাগের মো. মিজানুল হক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল বৃহস্পতিবার আবার অধিদপ্তরে গিয়ে শুধু পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালককে নিজ কক্ষে পাওয়া গেল। প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ বিভাগের দুই পরিচালক অফিসে আছেন বলে জানা গেছে; কিন্তু তাঁদের নিজ নিজ আসনে পাওয়া যায়নি। প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালককে সকাল ১১টার দিকে অফিস ত্যাগ করতে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট এক কর্মচারী জানান, তিনি ইউনিসেফের একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রশাসনের পরিচালক এস এম আনছারুজ্জামান বলেন, তাঁরা (প্রশিক্ষণের পরিচালকসহ) সংসদীয় কমিটির সভায় আছেন; কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে  যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে সূত্র নিশ্চিত করে, সেখানে এই অধিদপ্তরের কোনো পরিচালককে ডাকা হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনই এসব কর্মকর্তা অফিসে থাকেন না। অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন জেলা থেকে সেবা নিতে আসা শিক্ষক-কর্মচারীদের বলা হয়, তাঁরা মন্ত্রণালয়ে গেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল বৃহস্পতিবার নাম প্রকাশ না করে ভোলা থেকে আসা একজন সহকারী শিক্ষক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সপ্তাহে তিন দিন এসেও স্যারের (মহাপরিচালক) সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। ছুটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে আবার আসতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রংপুর থেকে আসা এক শিক্ষকের ভাষ্য, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকাল ১০টা থেকে স্যারের জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি অফিসে আসবেন কি না, সে কথাও এখানকার কেউ বলতে পারছেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ সময় মহাপরিচালকের দপ্তরের অতিথি কক্ষে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আরো ছয়-সাতজন সেবাপ্রত্যাশীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কেউ কেউ দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গাজীপুরের এক শিক্ষক বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৫ দিনে তিনবার এসেছি পেনশনের ঝামেলা নিয়ে। পরিচালক-প্রশাসনের কাছে কাজ; কিন্তু এক দিনও তাঁকে পাইনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোবাইল ফোনে এসব কর্মকর্তার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক এস এম আনছারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকার কারণে গত ১ জানুয়ারি থেকে শুক্র ও শনিবার ছাড়া কোনো সময় পাচ্ছি না। কখনো মন্ত্রণালয়, আবার কখনো অন্য স্থানে থাকতে হচ্ছে। আজ (বুধবার) সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ছিল। গতকাল (মঙ্গলবার) বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের কারণে মহাপরিচালকসহ অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) কোথায় ছিলাম, আগের শিডিউল দেখে বলতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রশিক্ষণ ও পলিসি অ্যান্ড অপারেশনের দুই পরিচালককে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত এক সপ্তাহ মন্ত্রণালয়সহ অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা অনুষ্ঠানের কারণে রাত ১টা পর্যন্ত আর্মি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। এই একসপ্তাহ ধরে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সেখানে। প্রতিটি পরিচালককে একেকটি কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মন্ত্রণালয়ে, আর্মি স্টেডিয়ামে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মিটিং করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির বিষয়ে সচিব বলেন, বদলি এবং পেনশনের আবেদন অনলাইনে বাড়িতে বসে করবেন শিক্ষকরা। কোনো শিক্ষকের অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে আসার দরকার নেই। এসব আবেদন বাড়িতে বসে তাঁরা করবেন, মোবাইল ফোনে মেসেজ যাবে। তাঁদের ঢাকায় আসার কোনো দরকার নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াত কালের কণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি পরিমাপে আবার ন্যাশনাল স্কিল অ্যাসেসমেন্টের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে অধিদপ্তরের পরিচালকরা বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সভায় উপস্থিত থাকতে হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মহাপরিচালক বলেন, এই অ্যাসেসমেন্টের কাজ মে মাসে শেষ হবে। তখন পরিচালকরা অফিসে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন।</span></span></span></span></p> <p> </p>